অনলাইন
নিটোর কর্তৃপক্ষের নীরবতা
ইন্টার্ন ভাতার দাবিতে দুদিন ধরে কর্মবিরতিতে ফিজিওথেরাপিস্ট শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার
(৬ ঘন্টা আগে) ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:১৮ অপরাহ্ন

ন্যায্য ভাতা পাওয়ার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ইন্টার্ন ফিজিওথেরাপিস্ট শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২ টা পর্যন্ত নিটোরের পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘ আট মাস ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও কোনো সমাধান আসেনি। বরং নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাতা দাবিতে নিটোরের ইন্টার্ন ফিজিওথেরাপিস্টদের আন্দোলন নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবির বিষয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের ন্যায্য অধিকারকে এক প্রকার অস্বীকারই করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপিস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (বাপসু) সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা আমাদের বাধা দিতে চেষ্টা করেছেন। আমাদের ন্যায্য ইন্টার্ন ভাতা না দিয়ে এভাবে দিনের পর দিন আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এক শিক্ষার্থী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সবাই শুধু বলছেন দাবি যৌক্তিক, অধিকার ঠিক আছে। কিন্তু কার্যত কেউই আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। একজন পরিচালক পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে সময় দিতে রাজি নন, অথচ আমরা দিনের পর দিন ঘুরছি। ছাত্রীদেরও মাসের পর মাস এমন অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে।
শিক্ষার্থী মিথিলা ফারজানা বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে ঘুরেছি। তারা বলেছেন নিটোর চাইলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন এ বিষয়ে। আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আমরা অবস্থান করে যাচ্ছি। পরিচালক মহোদয় এখনো অফিসিয়ালি আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি এ বিষয়ে। ইন্টার্ন ফিজিওরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর জন্য আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি ভাতা চাই।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই ধরনের বারবার ‘দায় এড়িয়ে চলা’ এখন তাদের মনে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।
অবস্থানে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তে যেতে চান না। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এখনো তারা শান্তিপূর্ণ পথেই রয়েছেন। তবে দাবি পূরণে দীর্ঘসূত্রতা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচির দিকে যেতে তারা বাধ্য হবেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিটোরে প্রতিবছর শতাধিক ফিজিওথেরাপি শিক্ষার্থী ইন্টার্ন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু চিকিৎসা সহায়তাকারী এই শিক্ষার্থীরা সরকারি চিকিৎসা শিক্ষানীতির আওতায় না পড়ায় তাদের ভাতা সংক্রান্ত একটি স্পষ্ট নীতিমালা এখনো গঠিত হয়নি। ফলে চিকিৎসকদের মতো ইন্টার্ন ফিজিওথেরাপিস্টরা কোনো সম্মানী পান না।
গত আট মাস ধরে এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও নিটোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করেছে। দাবি উঠেছে, চিকিৎসা পেশায় কাজ করা অন্য ইন্টার্নদের মতো ফিজিওথেরাপিস্টদেরও সম্মানজনক ভাতা দিতে হবে।
তবে দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে দায় চাপানোর প্রবণতা এবং বারবার আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘসূত্রতা তৈরির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে। আন্দোলনকারীদের মতে, এটা শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, বরং এটা সম্মান ও পেশাগত স্বীকৃতির লড়াইও।