ঢাকা, ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

ভারতীয় মিডিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ভারতীয় সাংবাদিকের

মানবজমিন ডেস্ক
২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ভারত ও পাকিস্তান ফিরে এসেছে সপ্তাহখানেক হলো। দুই দেশের নেতারাই সামরিক উপায়ে এবং নৈতিকতার দিক দিয়ে বিজয় দাবি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, আসলে কী হয়েছিল। পরের সপ্তাহে আমরা পাকিস্তানের ইস্যু নিয়ে বিশ্লেষণ করবো। এখন ভারতের দিকে দৃষ্টি দেবো। বিশেষ করে ভারতের মিডিয়ার দিকে।  জোরালোভাবে এটা পরিষ্কার যে, ভারতে শত শত মূলধারার নিউজ চ্যানেল আছে। এর মধ্যে অনেকেই তাদের উগ্রবাদ, সংবেদনশীলতা এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচারের জন্য পরিচিত। ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে এ বিষয়টি সবার সামনে আসে। মূলধারা থেকে বিচ্যুত এমন অনেকের প্রতিষ্ঠিত এবং স্টাফ আছে এরকম ভারতের অনেক বিকল্প মিডিয়া এ স্থানটা নেয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বৃহত্তর, করপোরেট অর্থায়নে পরিচালিত মিডিয়া আউটলেটের তুলনায় তারা সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। ভারতের মূলধারার মিডিয়ার জন্য এই মুহূর্তটা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? এ প্রশ্ন নিয়ে দ্য ক্যারাভান ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক হরতোষ সিং বল মুখোমুখি হন আল জাজিরার দ্য লিসেনিং পোস্টের রিচার্ড গিলবার্ট। এখানে সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-  
প্রশ্ন: গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র জোরালোকণ্ঠে কথা বলেছে ভারত। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশে ভারত সোচ্চার ছিল। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু অনেক ভারতীয় তাদের ক্ষোভ থেকে নিজস্ব মূলধারার সংবাদ মিডিয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রাঙ্ক’ করেছে। এই ক্ষোভের কারণ কি? 
উত্তর: বাস্তবে তাদের সামনে একটি মাত্রই বিকল্প ছিল। তা হলো টেলিভিশন চালু করা, মূলধারার মিডিয়া। এসব ব্যবহার করে তারা জানতে চেয়েছেন আসলে কী ঘটছে। কারণ, এটা ছিল প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে একটি উত্তেজনার সময়, সেটা নিয়ে উদ্বেগের সময়। এ সময়ে তারা পেলেন ভুল তথ্য। যেটা একরকম প্রতারণার চেষ্টা। একই সময়ে আপনি টেলিভিশনে যা পাচ্ছিলেন, তা ছিল একটি অনুষ্ঠান, যেন যুদ্ধের উদ্‌যাপন, নানারকম সার্কাস। জনগণ কি অভিজ্ঞতা পাচ্ছিল প্রকৃতপক্ষে আপনি যদি এসব ঘটনাকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেখেন তাহলে দেখবে, তারা সত্যি খুব, খুব ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিষয়টি একেবারেই হাওয়ায় উড়ে যায়নি। 
প্রশ্ন: আপনি কি আমাদের এসব কাহিনী প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো সম্পাদকীয় সীমারেখা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন? যেসব বিকল্প মিডিয়া এই সীমারেখা মেনে চলেনি তাদেরকে কি শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে? এখন কোন ধরনের বিষয় সীমার বাইরে রয়েছে?
উত্তর: আপনি কেবল ভারতীয় সরকারি ব্রিফিংগুলো দেখেই এ সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন, সেটা ভারতীয় মিডিয়ার বিপরীত, বেশ তথ্যবহুল। কিন্তু ভারতের পক্ষে কী ক্ষতি হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। বিশেষ করে পাকিস্তানে প্রথম হামলার সময় ভারতের যুদ্ধবিমানগুলোর কয়েকটির আসলে কী ঘটেছিল। সিএনএনে একটি আর্টিকেল ছিল। তা এখনো আছে। কিন্তু সেটা প্রচার করে দ্য ওয়্যার নামে একটি আউটলেট। কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই পুরো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ওই আর্টিকেলটি সরিয়ে দেয়ার পরই ওই আউটলেটকে পুনরায় চালু করা হয়। এখনো বিদ্যমান এমন সীমারেখার ওটা হলো একটি পরিষ্কার ধারণা। এটা নিয়ে ভারতের কোনো মূলধারার চ্যানেল বা সংবাদপত্র নজরে আনেনি। তারা জানতে চায়নি, ভারতের হামলার প্রথমদিকে আসলে কী ঘটেছিল। ভারতের কোনো ক্ষতি হয়েছিল কিনা। এটাই এখানকার (সম্পাদকীয়) সীমারেখা। এটা উল্লেখও করা উচিত নয়। যাচাই করারও কথা নয়। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করাও যেন উচিত নয়। 
প্রশ্ন: মোদির সরকার কমপক্ষে ১০ বছর ধরে ভারতের আধুনিক মিডিয়ার ল্যান্ডস্কেপকে রূপান্তর করছেন। আমরা দেখেছি বড় বড় মিডিয়া আউটলেট কিনে নিয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ আছে। বিজেপি’র মিত্র দলগুলো সাংবাদিকদেরকে আদালত পর্যন্ত টেনে নিচ্ছে। সরকারের জবাবদিহি চাইলে মূল্য দিতে হতে পারে অনেক। গত কয়েক সপ্তাহে, এটা কি বলা ঠিক হবে যে- মূলধারার টিভি আউটলেটগুলো প্রকৃতপক্ষে মোদি সরকারের আনুগত্য করছে? যদি তাই হয়, তাহলে কিভাবে? 
উত্তর: জনগণের ধারণা এবং ভারতের বাইরে থেকে যেকেউ তাকালে এটা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবেন। মোদি সরকারের ওপর যে অতিরঞ্জন, প্রচারণা, প্রত্যাশা ছিল, তা আসলে তাদের এমন এক কৌশলগত কোণে ফেলে দিয়েছে, যেখান থেকে তারা নিজেদের বের করে আনতে পারেনি। স্পষ্টতই, সরকার মিডিয়া কভারেজের বিষয়ে যে ব্যবস্থা নিতে পারতো, তা তারা এক দশক ধরে ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে। গত ১০ বছর ধরে এ সরকার যা করে এসেছে এটা তারই ধারাবাহিকতা। কিন্তু সরকার নিজেকে এইভাবে দেখছে না, যদিও ভারতের প্রপাগান্ডা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ভারতের মিডিয়া নিয়ে, ভারতীয় সরকারি বিবৃতির বাইরে তাদের প্রচারণা নিয়ে। ব্যাপকভাবে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কিন্তু কিছু কারণে, সরকার এটাকে ক্ষতি হিসেবে দেখে না। তবে সবার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার যে, এটা খুবই ক্ষতিকারক। 
প্রশ্ন: এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিজেপি স্পষ্টতই টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমগুলোকে সমর্থন করছে। এখানে একটি ভিডিওর অংশ দেয়া হলো যেটি সরকার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে। 
উত্তর: বিজেপি সরকারের এসব মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপ সমর্থন করছে। ফলত গত ১০ বছরে তাদের সমর্থনে এসব মিডিয়ার এমন রূপ হয়েছে। কেননা, এসব মিডিয়া সরকারকে শক্তিশালী করার কাজেই ব্যবহৃত হয়েছে। পাশাপাশি যারা সরকারের সমালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধেও এসব মিডিয়া সরব ভূমিকা পালন করছে। তারা ওই সকল মিডিয়া এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে, সত্য জানতে চেয়েছে, বিশ্লেষণ করতে চেয়েছে, সঠিক অবস্থান মূল্যায়ন করতে চেয়েছে বা সরকারের কৌশলগত স্বার্থ কী তা বুঝতে চেয়েছে। সম্প্রতি একটি নিবন্ধে বিজেপি’র খুব ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক একটি মধ্যমপন্থি লেখা লিখেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছে ভারত আড়াই ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে। দুটি ফ্রন্ট হলো পাকিস্তান ও চীন। আর অর্ধেক ফ্রন্ট হলো ভারতের অভ্যন্তরীন মানুষ। যারা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা প্রশ্ন করার মাধ্যমে বোধহয় ভেতর থেকে দেশকে দুর্বল করে তুলছে। সরকার কী করতে চায়, এ যুদ্ধের নাম কী হবে- এসব বিষয়ে প্রশ্ন করছিল তারা। এরা পাকিস্তান বা চীনের মতোই শত্রু। আর এসব ভিডিওর মাধ্যমে বিজেপি’র এজেন্ডা সমর্থন করা হচ্ছে। 
প্রশ্ন: মি. বল, আমি বুঝতে পারছি যে, আপনি পাকিস্তানি মিডিয়াকে এতটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন না। আমার মনে হয় না কোনো ভারতীয়ের কাছে নিজ দেশের ৪০০ টিরও বেশি টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের ওপর নজর রাখার মতো সময় রয়েছে। কিন্তু এই খবরের কভারেজের ক্ষেত্রে পাকিস্তানি মিডিয়ারও কিছু ব্যর্থতা রয়েছে। এই সংঘাতে পাকিস্তানি মিডিয়ার কভারেজ সম্পর্কে আপনার মতামত কী এবং ভারতে আপনি যা দেখছেন তার সঙ্গে এটি কীভাবে তুলনা করবেন? 
উত্তর: পাকিস্তানি মিডিয়া সম্পূর্ণরূপে তোতাপাখির মতো  দেশটির সরকারের অবস্থানকে বলে গেছে। পাকিস্তানের সরকার তাদের ব্রিফিংগুলোতে ভুল তথ্য এবং জাল খবর দিয়েছে। কোনো কোনো সময় পাকিস্তানের ছোট ছোট মিডিয়া আউটলেটগুলোতেও এ বিষয়ে প্রশ্ন  তোলা হয়নি। সুতরাং আমরা ভুল তথ্যের যুদ্ধের মধ্যেই ছিলাম। 
প্রশ্ন: বল, এমন কভারেজ থেকে কী হবে বলে আপনার ধারণা? গত দুই সপ্তাহ ধরে আমরা যা দেখেছি তার ফলে ভারতের মূলধারার মিডিয়া যেভাবে সংবাদ পরিবেশন করেছে তাতে কি কোনো পরিবর্তন এসেছে বলে আপনি মনে করেন? নাকি আপনি কেবল এই সত্যের জন্যই হতাশ যে, আমাদের এসব আরও দেখতে হবে?
উত্তর: আমরা হতাশ নই। আমরা এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ক্ষোভ জানাবো। যদিও আমি কোনো পরিবর্তন আশা করি না। এসব মিডিয়ার কারণে ভারতে সাংবাদিকতার যে ক্ষতি হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। এটি কেবল মোদি সরকার চায় বলেই নয়। এর কারণ হলো প্রচারের এই মূল্যবোধগুলো মিডিয়ার দৃশ্যপটে অন্তর্নিহিত হয়ে গেছে। এটি এখানেই অবস্থান করবে।

 

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status