দেশ বিদেশ
বন্দর চার্জ বৃদ্ধি: আমদানি পণ্যের দাম নিয়ে উদ্বেগ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবারআমদানি পণ্যের কন্টেইনারের বন্দরের ভাড়া কয়েকগুণ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ বন্দর চার্জ চারগুণ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে আমদানিকৃত সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মূলত এটি সাধারণ ভোক্তাকেই বহন করতে হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতিকে আরেক ধাপ উস্কে দেবে। উদ্যোক্তা ও আমদানিকারকদের জন্য এটি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও বৈষম্যমূলক কর প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মো. সহিদুল হক মোল্লা মনে করেন, ভোক্তা পর্যায়ে যেকোনো আমদানি পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে হলে বন্দরে আরোপিত সব ধরনের চার্জ কমাতে হবে। না হলে বেসরকারি খাত কঠিন চাপের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সহিদুল হক বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে ফ্রি ৪ দিবসে কোনোভাবেই পণ্য খালাস করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। বিশেষ করে পণ্য খালাসের জন্য বৃহস্পতিবার যে জাহাজ আসে অটোমেটিক শুক্র ও শনিবার সেটি বন্ধের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। ফলে এখানে ফ্রি দিবস বলে আর কিছু থাকছে না। একইভাবে নির্বাহী আদেশে ঈদ ও অন্যান্য উৎসবকালীন সময়ে কখনো ১০-১২ দিন ছুটি দেয়া হচ্ছে। ওই সময় আসলে বন্দরে কোনো কাজকর্ম হয় না। জাহাজ থেকে খালাসের পর বন্দরে ৪ দিন কন্টেইনার রাখার যে ফ্রি টাইম রয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে অনেক আমদানিকারক কন্টেইনার ডেলিভারি নিতে পারছেন না। এতে কন্টেইনারের জটলা তৈরি হচ্ছে বন্দরে। অথচ বন্ধের মধ্যেও বিপুল পরিমাণ চার্জ গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে অতিরিক্ত বন্দর চার্জ নেয়া হলে এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব কৃষকের ওপর পড়বে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আগামী কোরবানি ঈদের ছুটির সময় এ ধরনের চার্জ আরোপ করা থেকে সরকারের বিরত থাকা উচিত। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মোটর পার্টস ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের এই শীর্ষ নেতা বলেন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সহ নানান জটিলতার কারণে বন্দরে ১৫-২০ দিন কন্টেইনার রাখতে হয়। এখন চারগুণ হারে ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এতে ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো কন্টেইনারে ৪০০ ডলার পর্যন্ত ডেমারেজ দিতে হয়। বন্দরের ভাড়া চারগুণ করায় সব ধরনের শিল্পখাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্দর চার্জ কমিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনলে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। গতি ফিরবে ব্যবসা-বাণিজ্যে।
উল্লেখ্য, গত ১০ই মার্চ বন্দরের কন্টেইনার চার্জ বাড়িয়ে চারগুণ হারে আদায় করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে ফ্রি টাইমের পর ২০ বর্গফুট কন্টেইনারের জন্য প্রথম ৭ দিন দৈনিক ২৪ ডলার, দ্বিতীয় ১৩ দিন দৈনিক ৯৬ ডলার, তৃতীয় ২১ দিন দৈনিক ১৯২ ডলার করে পরিশোধ করতে হচ্ছে। একইভাবে ৪০ বর্গফুট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে প্রথম ৭ দিন দৈনিক ৪৮ ডলার দ্বিতীয়, ১৩ দিন দৈনিক ১৯২ ডলার এবং তৃতীয় ২১ দিন থেকে দৈনিক ৩৮৪ ডলার করে ভাড়া আদায় করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।