দেশ বিদেশ
বিএনপি সরকারে এলে স্কুলশিক্ষার্থীদের কারিকুলামে খেলাধুলা থাকবে: তারেক রহমান
আরিফ মাহফুজ, লন্ডন থেকে
২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবারবিএনপি সরকার গঠন করলে খেলাধুলাকে স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক কারিকুলামে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত রোববার সন্ধ্যায় লন্ডনের একটি হোটেলে আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ইউকের উদ্যোগে ২০২৪ সালের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে আগামীতে বিএনপি সরকার গঠনে সক্ষম হলে কীভাবে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গন সাজানো যায় এবং বাংলাদেশের আগামীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা তাদের মধ্যে থেকে বিভিন্ন খেলোয়াড়দেরকে বের করে নিয়ে আসা যায়, সে হিসেবে স্কুল লেভেল থেকে বিভিন্ন রকমের খেলার জন্য খেলোয়াড় বের করে আনবো। বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমরা ভিন্নভাবে সাজাবো। ছেলেমেয়েরা শুধু পড়ালেখা করবে না তাদেরকে খেলতেও হবে। এর কারণ একজন মানুষ যখন শারীরিকভাবে নড়াচড়া করবে তখন খুব স্বাভাবিকভাবে শরীরে রক্ত চলাচল করবে এবং রক্ত চলাচল যত বাড়বে ব্রেইনে অক্সিজেন সরবরাহ তত বেশি বাড়বে তখন তার চিন্তাশক্তিও বাড়বে। এর অর্থ যে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা যত বেশি করবে তার মধ্যে পড়ালেখাও বাড়বে। তাই পড়ালেখা ভালো করতে হলে খেলাধুলাও বেশি করতে হবে।
তিনি বলেন, সর্বত্র ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার মাঠের অভাব রয়েছে। ঢাকা শহরে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার জন্য সবুজ মাঠ বাড়াতে প্রতি দুটি ওয়ার্ডের মাঝে একটি সবুজ পার্ক তৈরি করা দরকার। এক্ষেত্রে লন্ডনের পার্কগুলোকে উদাহরণ হিসেবে নেয়া যায়। লন্ডনের কিছুটা জায়গা পরপর সবুজ গাছপালা বেষ্টিত পার্ক রয়েছে, আমাদের দেশে শহরগুলোতেও এরকম পার্ক দরকার।
ছেলেমেয়েদের খেলাধুলাকে আরও গতিশীল করতে স্কুলের সিলেবাসে পরিবর্তন নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, সিলেবাসে সব বিষয়েই ১০০ নম্বর থাকে সেখান থেকে ২০ নম্বর কমিয়ে ৮০ নম্বরে নিয়ে আসা হবে, ওই ২০ নম্বরের জন্য পাঁচটি স্পোর্টস বিষয় বাধ্যতামূলক করে দেয়া হবে। একজন শিক্ষার্থী ২০ নম্বরের জন্য পাঁচটি স্পোর্টস বিষয়ের যেকোনো একটি বেছে নেবে। যে কারণে ছেলেমেয়েরা ঘরে বসে থাকবে না। তারা খেলাধুলায় মনোযোগী ও পারদর্শী হবে। এতে তাদের পড়ালেখায় মনোযোগী হতে সাহায্য করবে। এভাবে দেশের স্কুলগুলো থেকে মেধাবী খেলোয়াড়দেরকে বাছাই করে আগামী ২০২৮ সালের অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করার সবরকম প্রস্তুতি করানো হবে। যাতে তারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসতে পারে। যারা দেশের জন্য সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে, এজন্য তাদের প্রস্তুতির সময়ের সকল সাপোর্ট সরকার বহন করবে। এরই মধ্যে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে তাহলে তাদের সকল প্রস্তুতির ভার বিএনপি সরকার বহন করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, বহু মানুষ তাদের জীবন দিয়েছে। এখন দেশ গড়ার পালা। তাই সবার কাছে আমার আহ্বান, আসুন সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ রেখে দেশটা গড়ি। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন মতপার্থক্য থাকতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, দেশের মানুষদের নিরাপদ রাখা, সবাইকে কর্মসংস্থান করে দেয়া, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়গুলোতে কারও দ্বিমত থাকার কথা না। কাজেই আসুন আমরা সকলে মিলে, সকল রাজনৈতিক দল একসঙ্গে মিলে কাজ করে দেশটাকে গড়তে পারি। দেশটাকে সুন্দরভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আরাফাত রহমান কোকো প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, কোকো সম্পর্কে বড় ভাই হিসেবে আমি একটাই কথা বলবো, একজন বড় ভাই তার ছোট ভাই সম্পর্কে গর্ব করার মতো কম বেশি যা দরকার, সবই আমার ছোট ভাই কোকোর মধ্যে ছিল। কোকো একজন স্পোর্টসম্যান ছিল, একজন ক্রীড়াবিদ ছিল। আর আমি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলাম, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী আর কোকো ওর অবস্থান থেকে চেষ্টা করেছে বাংলদেশের ক্রীড়া ব্যবস্থার জন্য অবদান রাখতে। যতটুকু সম্ভব ততটুকু করার চেষ্টা করেছে। কী কী করেছে, কতোটুকু করেছে- যারা বাংলাদেশে খেলেন, খেলোয়াড় আছেন তারা জানেন। সবাই বলছেন এবং ভবিষ্যতেও বলবেন। এতেই প্রমাণিত হয় কিছু হলেও বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের জন্য ভালো কিছু করেছে কোকো। যে জন্য বড় ভাই হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্ব বোধ করি।
আরাফাত রহমান কোকো মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ইউকের সভাপতি শেখ নাসেরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ সরফুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির প্রমুখ।