প্রথম পাতা
ইশরাক বললেন, দোষারোপ করছি না, সমাধান চাই
নগর ভবনে তালা উপদেষ্টা আসিফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
স্টাফ রিপোর্টার
১৮ মে ২০২৫, রবিবার
বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণার দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকরা। ‘ঢাকাবাসীর’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেন ইশরাক হোসেনের কর্মী সমর্থক ও দক্ষিণ সিটির সাধারণ ভোটাররাও। গতকাল তৃতীয় দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগর ভবনের সামনে ফের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগর ভবন থেকে সচিবালয়ের দিকে গিয়ে পুনরায় নগর ভবনে ফিরে আসেন তারা। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সরকারের সমবায় বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছে, ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে এবং নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাখা হবে। ওদিকে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ইশরাক হোসেন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ে তিনি সরকারকে দোষারোপ করছেন না। তবে এর সমাধান চান। তার আহ্বানে আন্দোলন হচ্ছে না জানিয়ে ইশরাক বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তারা দক্ষিণ সিটির ভোটার। তারা তাকে ভোট দিয়েছেন। এজন্য আন্দোলনে নেমেছেন। কারও দুর্ভোগ হয় এমন কর্মসূচি না দিতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান ইশরাক। একইদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ইশরাকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তাকে শপথ পড়ানোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।
নগর ভবনে তালা, কার্যক্রম স্থবির: শনিবার সকাল ৯টার দিকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে বিক্ষোভ শুরু করেন ইশরাক হোসেনের হাজারো সমর্থক। এ সময় তারা ইশরাককে মেয়র করো, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দাও, দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের পতন চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার। বিক্ষোভে সম্মতি জানিয়ে নগর ভবনের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। একইসঙ্গে ভবনে থাকা সরকারের সমবায় বিভাগের কার্যক্রমও বন্ধ থাকে। সমবায় বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সচিবালয় থেকে।
ওদিকে, নগর ভবন থেকে মিছিল নিয়ে ইশরাক সমর্থকরা সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ করেন। বেলা ১১টার দিকে নগর ভবনের সামনে থেকে হাজারো মানুষের মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের দিকে যান। মিছিলটি গুলিস্তান মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে সচিবালয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগুনোর চেষ্টা করেন। বাধা পেয়ে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা সচিবালয়ের সামনে হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পুনরায় নগর ভবনের সামনে ফিরে যান।
বিক্ষোভ চলাকালে সমবায় বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, রোববারও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে ঢাকাবাসী। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারকে দোষারোপ করছি না, সমাধান চাচ্ছি: ইশরাক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। এজন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো এক ব্যক্তি এবং সরকারকে দোষারোপ করছেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি। বলেন, আমরা এটার সমাধান চাচ্ছি। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, ধানের শীষের প্রার্থীর প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে। এই মামলাটি ছিল তাপস (ফজলে নূর তাপস) ও নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। তাদের পক্ষ হয়ে এই মামলা করা বাধাদান করতে পারে? তাহলে তো তারা সেই দোসরদের লোক হয়ে গেল আমি দোষ দেবো সেই দোসরদের, অন্য কাউকে দোষ দেবো না। দ্রুততম সময়ে মধ্যে রায়টি কার্যকর ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান ইশরাক।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের কোনো দলীয় ঘোষণা দেই না। কিছু করি নাই। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ করছে। এটা জনগণের অধিকার, তারা প্রতিবাদ করতেই পারে এবং করেই যাবে- আমি আশা রাখি। আর আমরা শপথ নেয়ার জন্য প্রস্তুত, আমরা চিঠি প্রদান করেছি।
ডিএসসিসিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক হোসেন বলেন, এই আন্দোলনটি আমি ব্যক্তি ইশরাক হোসেন আহ্বান করি নাই। এখানে আমাদের যারা ভোটার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের জনগণ এবং আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন তারা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন এবং আমি তাদের থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি এই আন্দোলনটি লাগাতার চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি মেনে নেয়া না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত। জনগণের পাশাপাশি ডিএসসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই আন্দোলনে যোগদান দিয়েছেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবের তিনি বলেন, এই আন্দোলনের ঘোষণা কিংবা নির্দেশনা কোনোটাই আমি দেই নাই। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে এই আন্দোলনটি করেছে। ভেতরে কিংবা বাইরে কারা তালা দিয়েছে, এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নাই। হাজার হাজার মানুষ তাদের ক্ষোভ থেকে করছে। আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেবো না। কারণ আমরা গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আমি অবশ্যই তাদেরকে বলবো, তারা এমন কিছু যাতে না করে যেটা জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
ইশরাক বলেন, গেজেট প্রকাশের ২০ দিন হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমাকে শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ধরনের পদক্ষেপ বর্তমান সরকার নেয়নি যেটি কিনা তাদের এখতিয়ারে পড়ে। বর্তমান সরকার বলতে, স্থানীয় সরকার বিভাগকে বুঝানো হচ্ছে। যেখানে নির্বাচন কমিশন থেকে এই নির্দেশনাটি গেজেটসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়। পাঠানোর পর তারা যে কাজ করে, আইনের দৃষ্টিতে অনেকে বলে সেটি বেআইনি। সেটি হলো, তারা পাল্টা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখে একাধিক রেফারেন্স দিয়ে বলার চেষ্টা করে যে, এখানে আপিল করবে কিনা। স্থানীয় সরকার কি নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নটি চলে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর এই সরকার ইতিমধ্যেই এক ধরনের হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। সেটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়ে জনগণ এখন শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের যে উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে, সেই উপদেষ্টা পরিষদের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে কিনা, জনগণ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে এটি সম্ভব নয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করার জন্য আবার চিঠি দিয়েছে, এখন কোথায় দিয়েছে, সেটি বলতে পারছি না। এটি বোঝা যায়, সরকারের ভেতরে একটি সরকার রয়েছে। যারা এখন দলীয় আচরণ করছে। তারা একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেয়ার জন্য তাদের পলিসি অনুযায়ী কাজ করে চলেছে।
মামলার রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের কথা উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, এখানে মাঝখানে আরেকটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যখন আইন উপদেষ্টা বললেন যে, আমাদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। যেটি নির্বাচন কমিশনের দরকার নেই। তারা স্বাধীন-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরে তিনি বললেন, আমাদের মতামত না নিয়ে তারা গেজেটটি করে ফেলেছেন। মতামতের জন্য যে ফাইলটি ৫ দিন যাবৎ তার টেবিলে পড়েছিল, সে বিষয়টি কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখানে ইসি’র একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে, ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। না হলে তারা আদালত অবমাননায় পড়ে যেতে পারে। কিন্তু যখন জনগণের সামনে এভাবে উপস্থাপন করা হবে, জনগণ কিন্তু এটা ভিন্নভাবে দেখবে যে- আইন মন্ত্রণালয়ের কথা তোয়াক্কা না করে কোনো ধরনের প্রভাব খাটিয়ে গেজেট করানো হয়েছে কিনা। এ ধরনের একটা চিত্র দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে অংশগ্রহণ, মামলা ও সম্প্রতি আদালতের রায়ের ফলাফলের কথা উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, কোনো কোনো সময়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের কর্তা-ব্যক্তি বলেছেন যে, আমরা অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করছি। এই বক্তব্যটি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে উঠে আসি নাই। নির্বাচনের শেষ সময়ও আমি বলেছিলাম, আমি মাঠে আছি, এখনো রয়েছি, আগামীতেও থাকবো। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আমরা মামলার সকল নথিপত্র সংগ্রহ করে সময়সীমার মধ্যেই মামলাটি দায়ের করেছিলাম। তিনি বলেন, সেই যে অপব্যাখ্যা করা হচ্ছিল, অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া সেটা আমরা দেই নাই। অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা আদালতে দিয়েছেন বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সেটাকে মেনে নিতে হবে। সেটাকে যদি কেউ মানতে অস্বীকার করে তাহলে ধরে নিতে হবে তারা আদালতকে অবমাননা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সচিব মো. মশিউর রহমান, আইনজীবী এডভোকেট নুরুল ইসলাম জাহিদ, এডভোকেট তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ, এডভোকেট রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
জনতার মেয়র ইশরাককে শপথ নেওয়ায় প্রতিবন্ধকতাকারী নাবালক উপদেষ্টা আসিফ ও মাষ্টার মাইন্ড আসিফ নজরুলের পদত্যাগ আবশ্যক।
সরকার চাইলে এখন বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করতে পারে।
মন্তব্য করে লাভ নেই, কে সুনে কার কথা। অযথা সময় নষ্ট। এ ছাড়া মানব যামিন সব মন্তব্য প্রকাশ করেনা।