প্রথম পাতা
আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা
হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩, ক্ষুব্ধ মায়ের প্রশ্ন
মাগুরা প্রতিনিধি
১৮ মে ২০২৫, রবিবার
মাগুরায় আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় বাকি তিন আসামি বোনের শাশুড়ি জায়েদা খাতুন, হিটু শেখের ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় দেন। ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আলামত নষ্টের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অন্য তিন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের পাশাপাশি মামলার বাদী শিশুটির মা আয়েশা খাতুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর দেয়া প্রতিক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। শিশুটির মা বলেন, ‘আমি খুশি না। এই মামলায় তিন আসামি খালাস পেল? ওরা তো এ কাজে সহযোগিতা করিছে। আমার বড় মেয়েরে হুমকি দেছে। তারে মারধর করছে, মুখ আটকায় রাখছে। ওরাও দোষী, ওদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।’ আমরা এ মামলায় নিজেদের মতো কোনো আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারিনি। আমাদের কোনো কথা বলতে দেয়া হয়নি। এর আগে সকাল ৯টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এ রায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। এ মামলায় অভিযোগ গঠন ও বিচার শুরুর ২১ দিনের মাথায় আলোচিত বিচার কার্যক্রম শেষ হলো।
উল্লেখ্য, গত ১লা মার্চ শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ওই দিন রাতেই শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। ওই দিন সামরিক হেলিকপ্টারে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় আনা হয়। দুই দফা জানাজা শেষে শ্রীপুরে গ্রামের বাড়ির একটি কবরস্থানে শিশুটির মরদেহ সমাহিত করা হয়।
এর আগে ৮ই মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭শে এপ্রিল এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলেছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুর বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুদণ্ড অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৫০৬ ধারায় দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায়) অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ১৩ই এপ্রিল এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ই এপ্রিল এ মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২৩শে এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১৫ই মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পাঠকের মতামত
A crime may directly punish one person, but its impact leaves stains that spread far and wide.
যারা খালাস পেয়েছে তারা শিশুর সাথে অপকর্ম কারির সহযোগি হিসাবে অবশ্যই দন্ড যোগ্য অপরাধী।