বাংলারজমিন
মহম্মদপুরে বন্ধ হয়ে গেছে পানি সাপ্লাই প্রকল্প
মাহামুদুন নবী, মহম্মদপুর (মাগুরা) থেকে
১৭ মে ২০২৫, শনিবার
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে, বাংলাদেশ রুরাল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রকল্প চালু হওয়ার তিনমাস পর আবার বন্ধ হয়ে গেছে। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আজও আলোর মুখ চোখে দেখেনি প্রকল্পটি। ফলে সংযোগ পেয়েও এ প্রকল্প থেকে নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মহম্মদপুর উপজেলার দুই শতাধিক পরিবার। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের অবহেলা ও দেখভালের অভাবে জনকল্যাণকর এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বলে অভিযোগ করেছেন অধিকাংশ গ্রাহক।
আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে উপজেলা সদর ও বিনোদপুর ইউনিয়নে এক কোটি ৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৮০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পানি সরবরাহ প্রকল্পটি কোনো কাজে আসছে না এলাকাবাসীর। এক যুগ আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো নিয়মিতভাবে পানি সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পাম্প ব্যবহৃত না হওয়ায় ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত হয়ে ক্রমাগত নষ্ট হচ্ছে পাম্প স্টেশন এবং এর মূল্যবান সব যন্ত্রপাতি। ৮টি গ্রামের ৩৬০ জন গ্রাহকের জন্য ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। প্রকল্পে মাটির নিচ দিয়ে ৮ কিলোমিটার পানি সরবরাহ পাইপ, ১০ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি রিজার্ভ ট্যাংক ও দু’টি পাম্প স্টেশন স্থাপন করা হয়। পানি সরবরাহ কাজ তড়িঘড়ি করে শেষ করেন রনি এন্টারপ্রাইজ ও নুরুল ইসলাম নামের দুই ঠিকাদার। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঠিকাদার তার কাজের সমুদয় বিল তুলে নিয়ে যান।
জানা যায়, কাজ শেষ হওয়ায় ৪ বছর পর স্থানীয়দের চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রাহকপর্যায়ে পানি সরবরাহ শুরু করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। মাত্র তিনমাস চালু থাকার পর বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কার্যক্রম। উপজেলা সদরের অভ্যন্তরে অবস্থিত পাম্প স্টেশনটি এখন ঘন জঙ্গলে ঢেকে আছে। ভেঙে গেছে মাটির নিচে পানি সরবরাহ পাইপের নিয়ন্ত্রণ সুইচের ঢাকনা। অনেক জায়গায় পাইপে ফাটল দেখা দিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে রিজার্ভ ট্যাংক ও পাম্প স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে নিয়ম অনুযায়ী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি গ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সভাপতি হন স্থানীয় সরকারদলীয় দুই নেতা। পানি সরবরাহ সংযোগ, পাম্প ও রিজার্ভ ট্যাংক রক্ষণাবেক্ষণ, পাম্পচালকের বেতন ও বিদ্যুৎ বিল কমিটি পরিশোধ করবে। গ্রাহকরা নিজ খরচে সংযোগ নিয়ে প্রতিমাসে কমিটির কাছে হারে বিল পরিশোধ করবে। কিন্তু অদ্যাবধি কমিটির কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। অন্যদিকে রসিদ না দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে বিল উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে তিন মাসের বিলের টাকা অফিস সহকারী আতাউর রসিদ না দিয়ে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, উত্তোলিত টাকা রেজিস্টার মেইনটেইন করা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। মহম্মদপুর পানি সরবরাহ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মো. খসরুল আলম জানান, গ্রহকরা ঠিকমতো বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পানি সাপ্লাই বন্ধ আছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল আধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসনাত কাজল মানবজমিনকে জানান, অফিসে জনবল কম থাকায় দেখভালের অভাবে প্রকল্পটি বন্ধ আছে। এ ছাড়া চালু করার বিষয়ে কোনো ফান্ড না থাকায় সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফান্ড পেলে হয়তো অতিদ্রতই চালু করা যেতে পারে।