বাংলারজমিন
দাবি পূরণ হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর
বৈষম্য ভাঙার আন্দোলন
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে
১৭ মে ২০২৫, শনিবারক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর বড় দাবির কোনোটিই পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ জেলার উন্নয়ন নিয়ে চলেছে বৈষম্য। এখন পটপরিবর্তনে বঞ্চিত চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন। তারা আন্দোলনে নেমে প্রত্যাশিত নাগরিক অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেছেন। তারা বলছেন, জেলার উন্নয়ন ছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, মানবসম্পদ, কৃষি, ক্ষুদ্রশিল্প এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ দীর্ঘদিন এসব থেকে বঞ্চিত। এবার সময় এসেছে, বৈষম্য ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পূর্ণাঙ্গ রেল বন্দর, সোনামসজিদ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রমের নথি মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। অথচ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি সকল আন্তঃনগর ট্রেন। একইভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পও রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। শুরু থেকেই এসব প্রকল্প নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ছিল উদাসীন। নানা প্রতিবন্ধকতার অজুহাতে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ফাইলবন্দি করে রাখা হয়। জেলাবাসীর অন্যতম দাবি উন্নত যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন। গুরুত্বপূর্ণ এই তিন খাতে কাঙ্ক্ষিত সেবাবঞ্চিত এ জেলার মানুষ। শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে উন্নয়ন হয়নি বলে মনে করে স্থানীয় নাগরিক সমাজ। বিশেষ করে যোগাযোগ খাতে চরম অবহেলার শিকার এই অঞ্চলের মানুষ। একমাত্র মহাসড়ক সম্প্রসারণ ও সকল আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে বদলে যাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতির চাকা এমনটিই বলছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত সকল আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি দীর্ঘদিনের। সরাসরি ট্রেন না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষকে ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহীতে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়। এ কারণে যাত্রী ও কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। স্থান নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চাঁপাইনবাবগঞ্জে জায়গা নির্ধারণ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ দারিয়াপুর এলাকার প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন এবং স্থানটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। সেখানেই অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার কথা। উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ। তবে দীর্ঘ সময়েও এ কাজের অগ্রগতি নেই। প্রাচীন এ জনপদে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন শিক্ষাবিদরা।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আঞ্চলিক বৈষম্য ভাঙার আন্দোলনের শুরুতেই চারটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করছে জেলাবাসী। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার রেল অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতি ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আলাদাভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন বলেন, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী চারটি আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু, পদ্মা, সিল্কসিটি ও মধুমতি এক্সপ্রেস চলাচল করে। অথচ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এই ট্রেনগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন হিসেবে চলাচল করে বনলতা এক্সপ্রেস। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও আঞ্চলিক বৈষম্য মনোভাবের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী রেল যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন জুয়েল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে সব আন্তঃনগর ট্রেন চালু হওয়া জেলাবাসীর প্রাণের দাবি। এ দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি চলবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ সময়ে উন্নয়ন বৈষম্যের জালে আটকা পড়ে এ জেলার মানুষ। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি ও শিল্পের প্রসার ঘটেনি। কৃষিনির্ভর চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ যতটুকু এগিয়েছেন তাদের নিজেদের চেষ্টায়। এতে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কৃতিত্ব নেই।
সমপ্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক শ্রমিক সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মেডিকেল কলেজ হয়নি। গ্যাস সংযোগ আসেনি। সোনামসজিদ পর্যন্ত সড়ক ফোর লেন হয়নি। কেন আন্তঃনগর রেল একটা থেকে আর বাড়েনি। ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্ব আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাভাবিকভাবে জনগন একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। বিগত সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চরমভাবে অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার। আগামীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর উন্নয়ন ও নাগরিক অধিকার আদায়ে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা জানান তিনি।