দেশ বিদেশ
মহেশপুর দত্তনগর কৃষি খামার
যুগ্ম পরিচালকের বিরুদ্ধে ফার্মের সম্পদ গায়েবের অভিযোগ
আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার
এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কৃষি খামারের যুগ্ম পরিচালক কে এম কামরুজ্জামান শাহিন। ঝিনাইদহের মহেশপুর দত্তনগর কৃষি খামারে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে প্রায় তিন বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে যাচ্ছেন। ২০২৪ সালে আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে করেছেন দিনের ভোট রাতে। আর নৌকায় ভোট না দিলে দিনমজুর শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা হবে বলে হুমকি দিতেন প্রকাশ্যে। তার পিতা আব্দুল মজিদ মহেশপুর উপজেলার কুশাডাঙ্গা গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার দত্তনগরে ২ হাজার ৭৩৭ একর জমি উপর এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার গড়ে উঠছে। সেখানে কুশাডাঙ্গা, গোকুলনগর, করিঞ্চা, মথুরা ও পাথিলায় বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে। এসব খামারে একজন করে উপ-পরিচালক দায়িত্বে থাকলেও ৫টি খামারের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা যগ্ম পরিচালক। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় দাপটের সঙ্গে একছত্র অধিপত্য বিস্তার করে এখনো শ্রমিকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছেন শাহিন। স্থানীয় লোক হওয়ায় ৫ই আগস্টের পরে তিনি ভোল পাল্টে সেজেছেন জামায়াতের সমর্থক। আর নিজেকে জামায়াত প্রমাণ করতে স্বরুপপুর ইউনিয়ন জামায়াতের কথিত সমর্থকদের দিচ্ছেন বিএডিসি’র কোটি কোটি টাকার জায়গায় দোকানঘর তোলার সুযোগ-সুবিধা।
ইতিমধ্যে বাজার কমিটির সভাপতি গোকুলনগর গ্রামের আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক কেশবপুর গ্রামের হালিম, একই গ্রামের আলী আহম্মেদ, স্বরুপপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান সাথী, গোকুলনগর গ্রামের আব্দুস সালাম, একই গ্রামের আবুল কালাম, আব্দুল হান্নান, মশা মিয়া ও খাজা ময়েন উদ্দীনসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দোকানঘর তোলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে বিএডিসি প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যমানের এক একর জমির দখল হারিয়েছে সরকার। সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় খামারের বাউন্ডারির মধ্যে আব্দুস সালাম, কালাম ও আলী আহম্মেদ নামে তিন ব্যক্তি লেদ কারখানা গড়ে তুলেছেন। এখান থেকে যুগ্ম পরিচালক নিয়েছেন বড় অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করেন বলেন, খামার সংলগ্ন কুশাডাঙ্গা গ্রামে যুগ্ম পরিচালক কামরুজ্জামান শাহিনের বাড়ি হওয়ায় কোনো শ্রমিক যদি পথ চলতে তাকে সালাম না দেন তাহলে পরদিন তার চাকরি থাকে না। এলাকার বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়ী করতে কুশাডাঙ্গা গ্রামের কিছু সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে জোরপূর্বক সাধারণ মানুষকে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করেন। ক্ষমতা আর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিএডিসি’র গাড়ি ও জনবল তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। দত্তনগর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, নৌকার বিজয় নিশ্চিত হলে কামরুজ্জামান শাহিন নিজ গ্রাম কুশাডাঙ্গায় ছাগল জবাই করে আনন্দ উৎসব করেছেন। নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দেয়ায় তিনি খামারের শ্রমিক রবিউল ইসলাম, রানা, আলী আহম্মদ ও আব্দুস সালামসহ অনেক শ্রমিককে বরখাস্ত করেছেন। নৌকা আর আওয়ামী লীগ হলেও তার কাছে বিশেষ সুবিধা পেতেন কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও শ্রমিক। নিজের গায়ে আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে শ্রমিক নিয়োগ, ধান ও ওষুধ ক্রয় টেন্ডারে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। ফলে গত অর্থবছরের আর লাইন ধান টেন্ডারের টাকাও এখনো বকেয়া রয়েছে। গত দুই বছরের সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন টেন্ডারের অডিট করলেই নূরানী চেহারার অন্তরালে থাকা কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে আওয়ামী সমর্থক ঠিকাদার হওয়ায় জনৈক ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে টেন্ডারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে দরপত্র পাওয়ার সুপারিশ করেছিলেন কামরুজ্জামান। কিন্তু হেড অফিস সেই সুপারিশ গ্রহণ করেনি। এদিকে ভিন্নমত দমনে কামরুজ্জামানের জুড়ি নেই। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক হলে ৬০ বছর বয়স হলেই বিদায় করে দেয়া হতো শ্রমিকদের। কিন্তু আওয়ামী ঘরনার হলে তখন আর বয়স কোনো বিষয় ছিল না। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, বাড়িতে আসলেই রাতের আঁধারে তার নিজ বাড়িতে আওয়ামীপন্থিদের নিয়ে সরকারবিরোধী ও খামার ধ্বংসের পরিকল্পনা করেন। সূত্রমতে পদ্মার এপারে দত্তনগরসহ ২২টি খামারে এই কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে বিএডিসিতে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। এ ব্যাপারে দত্তনগর কৃষি খামারের যুগ্ম পরিচালক কে এম কামরুজ্জামান শাহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করনেনি। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা হেড অফিসের বিএডিসি’র বীজ উৎপাদন খামার বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিন জানান, বিষয়টি তিনি এখন জানলেন। তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।