ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে জীবন দিলেন কাশ্মীরি তরুণ

মানবজমিন ডেস্ক
২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার
mzamin

শান্ত ও স্নিগ্ধ মনোরম দৃশ্যে ঘেরা কাশ্মীরের পহেলগাঁও গত মঙ্গলবার লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে একদল বন্দুকধারী। তাদের অতর্কিত হামলায় সেখানে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের একজন সৈয়দ আদিল হুসাইন শাহ। পেশায় একজন পনিওয়ালা বা ঘোড়াচালক। পহেলগাঁওয়ের মনোরম প্রকৃতির মধ্যে পর্যটকদের ঘোড়ায় করে ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন হুসেইন। পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্র সন্তান ছিলেন তিনি। তার মৃত্যু ভয়ার্ত ছিল না। সাহসিকতার সঙ্গে এক বন্দুকধারীর বন্দুক কেড়ে নেয়ার সময় তাকে হত্যা করা হয়। নিজ পুত্রের এমন সাহসিকতার ঘটনায় শোক, মর্যাদা এবং অসীম গৌরবের প্রতীক হয়ে উঠেছেন পিতা সৈয়দ হায়দার শাহ। এ খবর দিয়েছে দ্য হিন্দুস্তান টাইমস। এতে বলা হয়,  ৩০ বছর বয়সী আদিলের পিতা হায়দার শাহ বলেন, আমি তার শাহাদাতের জন্য গর্ববোধ করছি। আমি শুধু তার এই গৌরবের জন্যই বেঁচে আছি। অন্যথায় হুসেইনের তরুণ মৃতদেহ দেখে আমি মারা যেতাম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন হুসেইন। তার বাবা বলেছেন, পর্যটকদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে গোটা পরিবার শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তাদের তাড়া দিচ্ছে অসহনীয় যাতনা। তবে পুত্রের এমন নিঃস্বার্থ সাহসই হায়দারকে এখন বাঁচিয়ে রেখেছে। 

অন্য সবার মতোই শেষ দিনটি শুরু করেছিলেন আদিল। পহেলগাঁওয়ের মনোরম প্রান্তরের পর্যটকদের ঘোড়ায় করে ঘুরানোর উদ্দেশ্যে সকাল সকালই বের হয়েছিলেন তিনি। ওই দিন দুপুর ৩টার দিকে তার পরিবারের লোকজন পহেলগাঁওয়ে একটি হামলার খবর পায়। তখন থেকেই তারা আদিলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন। অবশ্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন তারা। যতক্ষণ না তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, আদিল আর দুনিয়াতে নেই। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন আদিলকে একাধিক গুলি করে তার বুক ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়েছে। বন্দুকধারীর হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পর্যটকদের রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। 

আদিলের পিতা জানান, তারা ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টায় জানতে পারেন যে, তার পুত্র আর জীবিত নেই। সেখানে আদিলের সঙ্গে তার মামা ছিলেন। কিছু পর্যটক আদিলের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন বলে গর্ববোধ প্রকাশ করেছেন তার পিতা। আর আদিলের মায়ের কান্না তখনো থামেনি। হৃদয়ের ক্ষত নিয়ে তখনো তিনি বিলাপ করছিলেন।  শোকাহত এই নারী জানিয়েছেন, আদিলই ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র খুঁটি। দিনে ৩০০ রুপি আয় করতেন আদিল। যা দিয়ে চাল কেনা হতো এবং পরিবারের সবাই তা একসঙ্গে খেতেন। এখন কে খাদ্যের যোগান দেবে বলে বিলাপ করছিলেন আদিলের মা। বলছিলেন, কে আমার জন্য ওষুধ নিয়ে আসবে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে বার বার আর্তচিৎকার করছিলেন ওই বৃদ্ধা।

আদিলের এই মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে আসে যখন তার জানাজায় জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ অংশ নেন। তাকে পহেলগাঁওয়ের হাপাতনার্ড গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার জানাজায় উপস্থিত হয়েছিলেন শত শত মানুষ। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী নিহত আদিল হুসেনের বাবা হায়দার শাহকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি শোকাহত ও নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিহত আদিলের ভাই সৈয়দ নওশাদ বলেন, আদিল হুসেন কাজ করতে পহেলগাঁওয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে এক বন্দুকধারী তার বুকে তিনবার গুলি করে। তিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে বৈসারণে নিয়ে যেতেন। মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা যখন পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়, তখন আমার ভাই ওদের থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যটক, যার বাবা ওই হামলায় নিহত হন, তিনি এসএমএইচএস হাসপাতালে আমাকে আদিলের বীরত্বের কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আদিলের সাহসিকতার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে লিখেছেন, তিনি যে পর্যটকদের ঘোড়ায় করে পার্কিং এলাকা থেকে বৈসারণ ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের রক্ষা করতে তিনি নিজের প্রাণ দিয়েছেন। তার শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status