বাংলারজমিন
কৃত্রিম খাদ্যে কোরাল মাছ চাষে বাকৃবি গবেষকের সাফল্য
বাকৃবি প্রতিনিধি
২৫ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবারবাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের লোনা পানির মাছ হিসেবে কোরাল বা ভেটকি মাছ অতি পরিচিত ও জনপ্রিয়। তবে স্বাদ ও পুষ্টিগুণের পরও উপযুক্ত পোনা ও কৃত্রিম খাদ্যের অভাবে এর উৎপাদন ছিল সীমিত। এর ফলে মাছটি কিনতে হতো উচ্চমূল্যে। এবার মাছটিকে সহজলভ্য করা ও উৎপাদন বৃদ্ধির পথে যুগান্তকারী সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকেরা। দেশে প্রথমবারের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রে ভাসমান খাঁচায় কৃত্রিম সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে এই ভেটকি চাষে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছে গবেষক দল। শুধু চাষই নয়, খাঁচায় উৎপাদিত মাছের গুণগত মানও ছিল প্রচলিত চাষকৃত মাছের চেয়ে উঁচুমানের। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ফিশ ইকোফিজিওলজি ল্যাবরেটরিতে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এবং মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে, সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টের (এসসিএমএফপি) আওতায় এই গবেষণা পরিচালিত হয় বলে জানান প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান গবেষক জানান, দেশের উপকূলীয় তিনটি অঞ্চলে (সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ, কক্সবাজারের মহেশখালী এবং ভোলার চর কুকরি-মুকরি) এই গবেষণার মাঠপর্যায়ের কাজ হয়। প্রত্যেক এলাকায় স্থানীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে খাঁচা তৈরি থেকে শুরু করে চাষের প্রতিটি ধাপে তাদের যুক্ত করা হয়।
খাঁচায় কোরাল মাছের চাষ পদ্ধতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষক জানান, খাঁচা তৈরি হয়েছে ৬ দশমিক ৭ মিটার বৃত্তাকার আকারে, যার ধারণক্ষমতা ৬০ ঘনমিটার। প্রতি ঘনমিটারে ১৫টি করে পোনা মজুত করা যায়। কৃত্রিম সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে টু-টায়ার চাষ পদ্ধতি অর্থাৎ প্রথমে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে নার্সিং (প্রাক-পর্যায় চাষ) এবং পরে খাঁচায় স্থানান্তর করে বড় করার মাধ্যমে এই মাছ চাষ করা হয়।
গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল ও লাভজনকতার বিষয়ে গবেষক বলেন, ‘এক বছর শেষে প্রতিটি খাঁচা থেকে গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি মাছ উৎপাদিত হয়েছে। প্রতি ঘনমিটারে উৎপাদন হয়েছে ১৩ থেকে ১৭ কেজি। যেখানে পুকুর বা ঘেরে প্রচলিত পদ্ধতিতে গড়ে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ৬০০ থেকে ১৫০০ কেজি। খাঁচায় চাষকৃত মাছের গড় আমিষের পরিমাণ ১৯ গ্রাম, যেখানে সাধারণ কোরালে এই পরিমাণ ১৭ গ্রাম। প্রান্তিক মাছ চাষিদের জীবনযাত্রার মানে এই গবেষণার প্রভাব নিয়ে প্রধান গবেষক বলেন, খাঁচায় ভেটকি চাষ শুধু মাছ উৎপাদন বাড়াবে না, বরং উপকূলীয় অঞ্চলের দরিদ্র মৎস্যজীবীদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরি করবে। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে মেরিকালচারের (সামুদ্রিক মাছ চাষ) বিকাশের একটি টেকসই পথ দেখাবে এই প্রযুক্তি।