বাংলারজমিন
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ভুল গ্রুপের রক্ত পুশ করায় রোগীর মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে
২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ হলেও ভুলবশত রোগীর শরীরে পুশ করা হয়েছে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত। আর এতেই ঘণ্টা কয়েক পরেই বিল্লাল হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া বিল্লাল মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় ওই হাসপাতালে গভীর রাত পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। জানা গেছে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে গত বুধবার সকালে বিল্লালকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় রক্তের হিমোগ্লোবিন কম থাকায় চিকিৎসকরা তার শরীরে রক্ত দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ। ক্রস ম্যাচিংও করা হয়েছিল। শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে ভুলবশত বি পজেটিভ রক্ত দেয়া হয়। কিন্তু সেই রক্তের ব্যাগের লেভেল না দেখে নার্সেরা রোগীর শরীরে পুশ করে ‘ও’ পজেটিভের স্থলে ‘বি’ পজেটিভ পুশ করেছে। পরে শরীরে রক্ত পুশ করার পর পরই রোগীর সারা শরীর ঠাণ্ডা হতে থাকে। তখনো পরিবারের কেউ বুঝতে পারেনি রোগী শরীরে ভুল করে ‘ও’ পজেটিভ এর স্থলে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত পুশ করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর অবস্থা অবনতি হলে তারা হাসপাতালের নার্স ও ডাক্তারদের অনেক ডাকাডাকি করলেও রোগীর কাছে নিতে পারেনি। কিছু পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে রোগীর শরীরে পুশ করা রক্তের ব্যাগ ও রক্ত সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চলে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। স্বজনরা জানান, রোগীকে ঢাকায় নেয়ার মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না। অক্সিজেন সংকট হয়ে গেলে সেটাও তারা দেয়নি। যার ফলে রাত ১০টার দিকে রোগী মৃত্যু হয়। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে ডাক্তার নার্সদের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তারা সঠিক বিচার দাবি করেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ইশতিয়াক আহমেদ জানান, বিকাল চারটার দিকে ডিউটিতে ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান। সেসময় রোগীর শরীরে ‘ও’ পজেটিভ রক্তের পরিবর্তে ‘বি’ পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়েছে। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রাত ৮টায় আমার ডিউটি শুরু হয়। আমি ডিউটি শুরু করার পর যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি। এরপরও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, রোগীর শরীরে খুব বেশি রক্ত যায়নি। তবে কাগজপত্র না দেখে রক্ত পুশ করা ঠিক হয়নি। এদিকে, হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্ম দিবসে তদন্তের রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই বেরিয়ে আসবে। মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি এসএম আমান উল্লাহ বলেন, রোগী মৃত্যুর ঘটনায় ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।