প্রথম পাতা
১০ নেতার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে আইজিপি’র দপ্তরে আবেদন
স্টাফ রিপোর্টার
১১ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন জানিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে ইন্টারপোলকে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অন্যরা হলেন- সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে আইজিপিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি তারা।
তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবো। ট্রাইব্যুনালে মামলার পরিসংখ্যান নিয়ে বলা হয়, মোট ৩৩৯টি অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বেসামরিক, সামরিক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ জন এবং ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। পরোয়ানা জারির পর ৫৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি ৮৭ জন আসামি পলাতক। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২২টি মামলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, উত্তরায় অবস্থিত একটি গোপন বন্দিশালায় উদ্ধার করতে গিয়ে টাইমার সংযুক্ত শক্তিশালী বোমা দেখা যায়। গত ২৫শে জানুয়ারি ওই বন্দিশালার একটি সাউন্ডপ্রুফ কক্ষে তল্লাশি চালানোর সময় বালতির নিচে লুকিয়ে রাখা বোমাগুলো পাওয়া যায়। দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত স্টপ বলে সতর্ক করি। এর ফলে আমরা রক্ষা পাই। ভেতরে পাওয়া এই বিস্ফোরকগুলো একসঙ্গে ফাটলে পুরো ভবন ধ্বংস হয়ে যেতো বলে জানিয়েছে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল। নিরাপত্তাজনিত কারণে ঘটনাটি তখন গোপন রাখা হয়। বোম ডিসপোজাল ইউনিট গিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে। বোমাগুলোর শক্তি এতটাই বেশি ছিল যে একসঙ্গে বিস্ফোরিত হলে পুরো ভবন উড়ে যেতো। সেই গোপন ঘরে গুম ও নির্যাতনের শিকারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন রুমের ছদ্ম দেয়াল ভেঙে সেল, বাথরুম, টর্চার রুমের সন্ধান পাওয়া যায়। ঘটনাগুলো ধাপে ধাপে ডকুমেন্টেড করে রাখা হয়েছে। তাজুল বলেন, আমরা তখন ঘটনাটা জানায়নি। কারণ এতে তদন্ত বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই ঘটনার কয়েকদিন পরেই প্রধান উপদেষ্টা ওই গুম ঘর পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। আমরা চাইনি এটা নিয়ে নিরাপত্তার অজুহাতে প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শনে যাতে কোনো ধরনের বাধা না আসে। আমরা মনে করেছি, গুম ঘরটি প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শন করা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চারটি মামলা তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো হলো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা, রাজধানীর চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা এবং রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তির ওপর গুলির ঘটনায় হওয়া মামলাটি রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য এখন পর্যন্ত এক হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এক হাজারের বেশি ভিডিও পর্যালোচনা, যাচাই-বাছাই ও জিও লোকেশন কাজ করা হয়েছে। গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫টি জেলায় তদন্ত পরিচালনার উদ্দেশ্যে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত চারটি গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে আট শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।
সভায় প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাইমুম রেজা তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির অর্থ হলো- ওই ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচারের মুখোমুখি করতে অথবা দণ্ড কার্যকর করার জন্য খুঁজছে। সদস্য দেশগুলো ইন্টারপোলের মাধ্যমে পলাতক আসামির সম্পর্কে তথ্য বিনিময় করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এবং সে দেশের সরকার তা খতিয়ে দেখে সন্তুষ্ট হলে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
পাঠকের মতামত
রেড এলার্ট দিয়ে কোন লাভ নেই, ওদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হউক।