প্রথম পাতা
আইএমএফের কিস্তি ছাড়ের সমঝোতা এখনো হয়নি
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবারআন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের ৪র্থ ও ৫ম কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে শেষ হওয়া পর্যালোচনা বৈঠকে সমঝোতা হয়নি। ফলে অর্থ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত জানায়নি সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এ বিষয়ে আলোচনা আরও চলবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দুই কিস্তির অর্থ পাওয়া যেতে পারে জুনের শেষ দিকে।
আইএমএফ জানিয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও তা এখনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। মূল্যস্ফীতি (৯.৪ শতাংশ) এখনো উচ্চপর্যায়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ সফর শেষে বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায় আইএমএফ’র প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে আইএমএফ’র গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান (তিনি মিশনপ্রধান) ক্রিস পাপাজর্জিওসহ অন্য ৯ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাম্প্রতিক উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত গ্রীষ্মের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে পুনরুদ্ধার ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে খুব ভালো অগ্রগতি দেখেছে। তারা জানায়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ টানতে সুশাসন নিশ্চিত জরুরি। জুনে আইএমএফ’র বোর্ড মিটিং আছে। সেখানেই বাংলাদেশকে দেয়া ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ৪র্থ ও ৫ম কিস্তির অর্থ পাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এ বৈঠক হবে ২১ থেকে ২৬শে এপ্রিল।
পাপাজর্জিও মনে করেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের পাশাপাশি বিনিময় হারও স্থিতিশীল। রিজার্ভের পরিমাণ এমনকি তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার আরও নমনীয় হলে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বাড়বে।
কর-ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আইএমএফ বলেছে, করনীতি ও প্রশাসনের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য থাকা উচিত। এ ছাড়া করছাড় কমাতে হবে, করনীতিকে সহজ করতে হবে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির টেকসই পথ খুঁজে বের করতে হবে।
ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে আইনগত সংস্কার ও কার্যকর সম্পদ মান যাচাই এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও সুশাসন জোরদারের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার জোরালো অগ্রগতি দরকার।
মিশনটি ৬ই এপ্রিল থেকে বুধবার পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ইত্যাদি দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। ৬ ও ১৬ই এপ্রিল এ মিশন বৈঠক করেছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও।
এর আগেও কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফ মিশন এসেছিল। মিশন শেষে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি ‘স্টাফ লেবেল’ চুক্তি হয়েছিল। এটি আসলে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে প্রাথমিক ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ। এবার এ ধরনের স্টাফ লেবেল চুক্তি হয়নি বলে জানা গেছে।
আইএমএফ’র সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের বেলায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আশা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে আগামী জুনে।
সফরকালে আইএমএফ’র প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। এ ছাড়া, তারা বেসরকারি খাত, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছে।
পাঠকের মতামত
ধারণা করি নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইএমএফ ঋণের অর্থ ছাড় দিতে রাজি নয়!