ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

বিনিয়োগ সম্মেলনে ড. ইউনূস

বিশ্বকে বদলে দেয়ার অভিনব সব ধারণা আমাদের আছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

বাংলাদেশকে ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা উল্লেখ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ     
ইউনূস। বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসুন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ব বদলে দিতে ভূমিকা রাখুন। ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার বিশ্বকে বদলে দেয়ার অভিনব সব ধারণা রয়েছে। এসব ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই, যেন আপনারা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকেই বদলে দেয়ার যাত্রায় যুক্ত হতে পারেন।’ 

বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। 

স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশের ব্যবসা এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকেরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। শীর্ষ সম্মেলনে বিশেষভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গৃহীত অর্থনৈতিক সংস্কার এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনি যদি কোনো লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চান, তাহলে বাংলাদেশই আপনার সেই জায়গা। বাংলাদেশ কাজ করে দেখায়, আর একবার কেউ শুরু করলে অন্যরাও তার অনুসরণ করে।

কীভাবে মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে সুখী হয়, তার বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘টাকা উপার্জন করে মানুষ নিঃসন্দেহে আনন্দ বা সুখ পায়, কিন্তু অন্যকে সুখী করার মধ্যে অতিরিক্ত আনন্দ বা সুখ নিহিত রয়েছে।’

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি আপনি বাংলাদেশে ব্যবসা করেন, তাহলে আপনি সুখ এবং অতিরিক্ত আনন্দ দু’টিই পাবেন। কোনো খরচ ছাড়াই এই অতিরিক্ত আনন্দ আপনি লাভ করতে পারেন এবং এটি করে আপনি গর্বিত হবেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো এই অঞ্চলকেই দেখেন যেখানে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি একসঙ্গে অর্থ উপার্জন এবং মানুষের জীবন পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, আপনাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই অতিরিক্ত সুখ বা আনন্দ উপভোগ করতে পারবে, যদি তারা তাদের প্রভাব মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বিশ্ব বদলে দেয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এর মাধ্যমে নতুন সভ্যতা গঠনের ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, আমি বলছি, আমরা ‘তিন শূন্য’র একটি পৃথিবী তৈরি করতে পারি। এটা সরকার দিয়ে নয়, ব্যবসার মাধ্যমে করা সম্ভব। কারণ এটা সরকারের কাজ নয়, বরং ব্যক্তিমাত্র, মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মানুষ। আমরাই বিশ্বকে বদলে দিতে পারি।’

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের সময় মানুষের নিদারুণ কষ্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তবে ১৯৭৪ সাল থেকে এই স্বল্প সময়ের যাত্রায় আমরা এক অভূতপূর্ব অবস্থানে চলে এসেছি। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তিনি বলেন, আপনারা আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শামিল হন।

এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদানের’ স্বীকৃতিতে এই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইয়ংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে তার হাতে নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তুলে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় নাগরিক না হয়েও ‘সম্মানিত নাগরিক’ মর্যাদা পেলেন কিহাক সাং। কিহাক সাং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত। কিহাক সাংসহ মোট পাঁচজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। উদ্ভাবনে-ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড, বিদেশি বিনিয়োগে-বিকাশ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ওয়ালটনকে এক্সেলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর কাছ থেকে ‘এক্সিলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’-এর ক্রেস্ট গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের তৃতীয় দিনে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে, দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে এফবিসিসিআই। সেমিনারের শুরুতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান নীতিগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিনিয়োগ-সংক্রান্ত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সমাধান করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার অবকাঠামোতে বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে।

এদিকে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ এ কর-স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য একটি প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবো; যা নিশ্চিত করবে ন্যায্য আচরণ, কর-স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের অধিকার। এ আইনি কাঠামো প্রাতিষ্ঠানিক নিশ্চয়তা দেবে এবং বাংলাদেশকে একটি স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসাবান্ধব দেশ হিসেবে তুলে ধরবে।

সন্ধ্যায় বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয়দিনের আয়োজনের উপর অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিংয়ে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিশ্বব্যাপী উন্নতমানের নিটেড টেক্সটাইল, ডাইং প্রসেস এবং পোশাক উৎপাদনের জন্য চীনভিত্তিক স্বনামধন্য পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বাংলাদেশে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এই লক্ষ্যে বিডা ও হান্ডা টেক্সটাইল কোং লিমিটেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়। তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতাধীন টেক্সটাইল ও ডাইং খাতে ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের আওতাধীন পোশাক শিল্পে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো- পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যাল ও কৃষি অন্যতম। 

বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আমাদের একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে। আমরা চিন্তাভাবনা করেছি ফ্রি ট্রেড জোনের দিকে চলে যাবো। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জেবেল আলী পোর্ট আছে, সেটি আমিরাতের অর্থনীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান রাখে। সেই বন্দরের মতো করে আমরা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছাকাছি কোনো এক জায়গায় এই ফ্রি ট্রেড জোনের কথা চিন্তা করছি।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ জানান, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলায়ম এসেছেন আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নিতে। তিনি আমিরাতের একজন ভিআইপি, এমনকি রাজপরিবারের খুব কাছের লোক। উনি একটা ছোট্ট প্রোগ্রাম করেছেন এখানে। তবে তার প্রোগ্রাম ফুল ছিল, এমনকি অনেক দর্শককে আমরা জায়গা দিতে পারিনি। ডিপি ওয়ার্ল্ড থেকে কারিগরি বিশেষজ্ঞ নিয়ে, বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে আমরা ফ্রি ট্রেড জোন করার চেষ্টা করছি। এটি ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানের সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল। 

এ সময় তিনি জানান, এবারের সামিটে এমন সাড়া পাওয়া গেছে যে, অনেককে জায়গা দেয়া যায়নি। অনেকে জায়গা না পেয়েও এসেছেন বিনিয়োগকারীদের দেখা পেতে। সেজন্য আমরা ভাবছি, আগামী সামিট চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে নিয়ে যাবো। এটার চাহিদা ওখানেই বেশি।
 

পাঠকের মতামত

ডিসেম্বরে নির্বাচন দিলেই সব শেষ!

হোসাইন বিন মানসুর
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫:৫৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status