প্রথম পাতা
ইইউ’র সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে ঢাকা
মিজানুর রহমান
১০ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)’র সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে বাংলাদেশ। প্রায় ২৫ বছর আগে ইউরোপের ২৭ রাষ্ট্রের ওই জোটের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি সই করেছিল ঢাকা, যা ছিল মূলত উন্নয়ন সহযোগিতা-কেন্দ্রিক। এবার সেই সহযোগিতাকে পরের ধাপে অর্থাৎ রাজনৈতিক পর্যায়ে উত্তরণের লক্ষ্যে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) সই করতে যাচ্ছে দুই পক্ষ। চুক্তিটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ব্রাসেলসে আজ থেকে শুরু হচ্ছে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র বলছে, দর কষাকষি শেষ করে আগামী দেড় বছরের মধ্যে চুক্তিটি সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হতে পারে। অর্থাৎ চুক্তির সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০২৬ সালের জুনে। সেগুনবাগিচার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- প্রস্তাবিত চুক্তিটির আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকবে। ফলে চুক্তি সইয়ের মাধ্যমে ইইউ’র সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্বের বিষয়ে সহযোগিতার একটি রূপরেখা প্রতিষ্ঠা হবে। ব্রাসেলসে আজ থেকে পিসিএ নিয়ে শুরু হওয়া দু’দিনব্যপী আনুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ে কর্মকর্তারা জানান, হাইব্রিড ফরমেটে আলোচনাটি হবে। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম। ইইউ’র পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সদর দপ্তরের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পামপোলিনি।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ) মো. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ইইউ’র সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার রাজনৈতিক উত্তরণ ঘটবে পিসিএ-সইয়ের মাধ্যমে। ফলে রূপরেখা চুক্তিটি সই হলে গণতন্ত্র, সুশাসন, নিরাপত্তা, মানবাধিকারের পাশাপাশি অর্থনীতি এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগের মতো নানা ইস্যুতে সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।
তিনি জানান, দর কষাকষি শেষ করে আগামী বছরের জুনে চুক্তিটি সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে ইইউ’র সঙ্গে পিসিএ সই করবে।
পিসিএ এবং এর গুরুত্ব: ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী পিসিএ হলো আইনগত বাধ্যতামূলক চুক্তি যা ইইউ এবং একটি অংশীদার দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি রূপরেখা প্রতিষ্ঠা করে।
অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে ইইউ অংশীদার দেশগুলোতে রাজনৈতিক সংলাপ, শান্তি ও নিরাপত্তা, সুশাসন ও মানবাধিকার, বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং আর্থিক সহযোগিতাসহ বিস্তৃত ক্ষেত্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ এই সহযোগিতার পরিধিতে রয়েছে গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করা। একটি শক্তিশালী মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশের বিকাশ নিশ্চিত করা। নানা ক্ষেত্রে বাণিজ্য সম্পর্ক এবং সহযোগিতা জোরদার করা।
পিসিএর উপাদান: চুক্তির আওতায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, শ্রম অধিকার, সংযুক্তি, প্রতিরক্ষা, অন্তর্জাল নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, জ্বালানি, মৎস্য, দক্ষ অভিবাসন, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে সহযোগিতা, কৃষিসহ প্রায় ৩৫টি বিষয় রয়েছে।
পিসিএ নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এবার মূল আলোচনা শুরু হবে। ইইউ’র সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা চুক্তি ভবিষ্যতে প্রতিস্থাপন হবে পিসিএ চুক্তির মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত ২০০১ সালে ইইউ’র সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। সেই চুক্তিতে অর্থনীতি, উন্নয়ন, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রাজনৈতিক উত্তরণের আকাঙ্ক্ষায়
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্কের বিস্তৃতির লক্ষ্যে ২০২৩ সালের ২৫শে অক্টোবর নতুন করে ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাসেলসে ওই অনুষ্ঠানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন উপস্থিত ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির প্রথম দফার আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় পিসিএ চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছিল ইইউ। পরবর্তীতে ইইউ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে পিসিএ সই করার সিদ্ধান্ত নিলে নভেম্বরে ঢাকায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছিল।