ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

লোডশেডিংমুক্ত রমজান, গরমেও সহনীয় রাখার চেষ্টা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার

এবার রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। কোথাও বড় ধরনের লোডশেডিংয়ের খবর নেই এখন পর্যন্ত। বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে আগে থেকেই পরিকল্পনামতো জ্বালানি আমদানিতে গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে রমজানে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা যায়নি। মানুষকেও রমজানের আগে সচেতন করা হয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে। ইমাম এবং মুসল্লিদের মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিল এসি’র তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি রাখতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ জোগানে সাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সফল হলেও টেকসই সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি অর্থ সংস্থানের পরিকল্পনা জরুরি।
রমজান মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো এবং লোডশেডিং না দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৪ কার্গো অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির করার কথা মাসের শুরুতে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।  বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের গরমে লোডশেডিং হতে পারে দেড় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু অর্থ ও ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে লোডশেডিং ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার নানা পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেদিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কয়লা, ফার্নেস অয়েল, তরল তৈল এবং গ্যাস আমদানির প্রতি তারা নজর দিচ্ছেন।  গ্রীষ্মে সাড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মাথায় রেখে এগুচ্ছেন তারা।  কোনো মেশিন নষ্ট না হলে  নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, চলতি বছর রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এলএনজি, কয়লা, ফার্নেস অয়েল আমদানিতে অর্থের জোগান নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর তারা যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া রমজানে লোডশেডিং না হওয়ার আশ্বাস দেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে। তারপর চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ালেও প্রায় পুরোটাই জোগান দেয়া গেছে। আদানির কেন্দ্র থেকে সাড়ে ১৩০০, ভারতের অন্য উৎস থেকে আসছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট। বেড়েছে গ্যাস, কয়লা, তরল জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদন। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বড় অংকের বকেয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। রমজানের শেষদিনগুলোতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। লোডশেডিং মুক্ত রাখতে অতিরিক্ত উৎপাদনে সরকারের ওপর বাড়বে ভর্তুকির চাপ।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে,  শীতকালে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট। সেচ ও গরমের কারণে এই বিদুতের চাহিদা গরমে ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট হয়ে যায়। এর মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট লাগে আমাদের সেচ কাজে। কিন্তু সেচ বন্ধ করা যাবে না। সেচ বন্ধ হলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং অতিরিক্ত আলোকসজ্জার জন্য ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এজন্য ইমাম এবং মুসল্লিদের মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিল এসি’র তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি রাখার জন্য। 

এদিকে, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ-জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতে জুন পর্যন্ত ৬৩ হাজার কোটি টাকা (৫১৭ কোটি ডলার) চেয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি মাস থেকে জুন পর্যন্ত এলএনজি, বিদ্যুৎ ও তেল আমদানি এবং বকেয়া বিল শোধ করতে এই অর্থ প্রয়োজন বলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আগামী এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে চলছে সেচ মৌসুম। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের গরমে লোডশেডিং হতে পারে দেড় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু অর্থ ও ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে লোডশেডিং ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট। গরমে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৮ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। তবে জ্বালানি সংকট, কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও অদক্ষতার কারণে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।  গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫ থেকে ১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছে গড়ে ১০৫ কোটি ঘনফুট। এপ্রিল থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দেয়া হবে। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছিল পেট্রোবাংলা।

 

 

 

পাঠকের মতামত

Ailhamdulillah

Md Abul Basher
২২ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status