শেষের পাতা
মধুপুরের বনাঞ্চলে যত লোমহর্ষক ঘটনা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
পুলিশের চেকপোস্ট না থাকা ও পুলিশের টহল জোরদার না থাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে বারবার লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ঈগল বাসের নৈশকোচে ডাকাতি ও যাত্রীকে ধর্ষণের রাতেও হাইওয়ে পুলিশের ডিউটি ছিল। এরপরও বারংবার এমন দুর্ধর্ষ ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
দিনের বেলাতেও সুনসান নীরবতা মধুপুরের বনাঞ্চল। আর বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই তৈরি হয় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে ভুতুড়ে পরিবেশ। এখানেই বারবার সংঘটিত হচ্ছে লোমহর্ষক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর থেকে উত্তরবঙ্গের ২১ জেলাসহ মোট ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করছে দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে। দিনের বেলায় ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও রাতের বেলা তাদের খুব একটা চোখে পড়ে না। ফলে অপরাধীরা অনায়াশেই অপরাধ করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেসের চলন্ত বাসটি ডাকাত দলের সদস্যরা প্রায় ৩ ঘণ্টা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে বেড়ায় ।
সকল যাত্রীর হাত-পা বেঁধে টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার লুট করে ঐ চলন্ত গাড়িতেই এক গৃহবধূকে ৬ জন মিলে গণধর্ষণ করে। অথচ এত সময়ের মধ্যেও হাইওয়ে পুলিশ ও টহল পুলিশের নজরে পড়েনি। এর আগে ২০১৬ সালের ১লা এপ্রিল ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরদিন ভোরে গাজীপুর যাওয়ার পথে বিনিময় পরিবহনের বাসে উঠেন এক নারী। বাসে আর কোনো যাত্রী না নিয়ে গেট বন্ধ করে দিয়ে মধুপুর বনাঞ্চলে নির্জন স্থানে বাস থামিয়ে তারা ওই নারীকে গণধর্ষণ করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এ ছাড়াও ২০১৭ সালের গত ২৫শে আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা খাতুন নামের এক নারীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা করে একই সড়কের বনাঞ্চল এলাকায় ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা।
পরে মধুপুর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কবরস্থানে দাফন করে। ২০০৯ সালের ২৬শে জানুয়ারি টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ সড়কের জলছত্র এলাকায় বাসের ভেতর বাসন্তী মাংসাং নামের এক প্রধান শিক্ষিকার কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতে বাধা দেয়ায় ডাকাতরা ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। অথচ এসব অপরাধীকে চোখেই পড়ছে না হাইওয়ে পুলিশ ও দায়িত্বরত টহল পুলিশের।
এ বিষয়ে প্রান্তিক সুপার পরিবহনের চালক সোহাগ মিয়া বলেন, রাতে কোথাও কোন চেকপোস্ট নাই। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের খুব একটা তৎপরতাও চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যেই মহাসড়কে ডাকাতের কবলে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মির্জাপুর গোড়াই হাইওয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্লাহ টুটুল বলেন, মহাসড়কে সারা রাতই হাইওয়ে পুলিশ ডিউটিতে থাকে। গত মঙ্গলবারেও মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ ছিল। গোড়াই হাইওয়ে ফাঁড়ির আওতায় একটি চেকপোস্ট আছে এবং তারা রাতে সবসময় টহল দিয়ে থাকে
টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, রাতের অন্ধকারে বাসের ভেতর কি হয় সেটা বুঝা যায় না। তাই অপরাধীদের আটক করা যায়নি। তবে দ্রুতই এসব অপরাধীকে ধরতে নতুন কৌশল অবলম্বন করবেন বলে জানান তিনি।