ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বাহাস

কাজী সোহাগ
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবার
mzamin

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার সুযোগ নিয়ে  বাহাস হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। সেখানে কয়েক এমপি চিকিৎসা সেবার পক্ষে নিজেদের মতামত জানান। আবার কয়েকজন এর বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি সংসদীয় কমিটি। সাধারণত কমিটিতে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে সুপারিশ বা পরামর্শ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। ঘটনাটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির। গত মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চূড়ান্ত কার্যবিবরণীতে এ নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন- কমিটির সভাপতি কুমিল্লা-১ আসনের এমপি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা হলো ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থিত একটি হাসপাতাল। এটি বাংলাদেশের সকল ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চেইনের একটি। সমস্ত সামরিক কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এখান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়ে থাকেন।

 এখানকার সব ডাক্তার সামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এএফএমসি বা এএমসি স্নাতক। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছাড়াও চিকিৎসা খরচ বহন সাপেক্ষে বেসামরিক ব্যক্তিরাও সেবা গ্রহণ করতে পারেন। সংসদীয় কমিটির ১৭তম বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালাচনা করতে গিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম সিএমইএচ মুত্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে জানান, সশস্ত্র বাহিনীতে নতুন নতুন ডিভিশন/ইউনিট/প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ায় সিএমএইচ হাসপাতালসমূহের উপর নির্ভরশীল জনসংখ্যার চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসা প্রদানকারী জনবল বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসা প্রাধিকৃত করলে মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে বাহাসে জড়িয়ে পড়েন এমপিরা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সূর্যসন্তান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের সময় কারও মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছিল। সকল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রাধিকারভুক্তকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সভাপতির নির্দেশনা কামনা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে পারলে সেটি সিএমএইচ-এর জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় হবে মর্মে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। কমিটির অপর সদস্য লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মোতাহার হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত কার্যপত্রে লেখা হয়েছে যে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা প্রাধিকৃত করলে মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এখনো মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সম্মাননা, সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, চিকিৎসাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। অথচ নিজ দেশেই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তিনি কমিটিকে অবহিত করেন যে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বর্তমানে ৮০ হাজারের অধিক মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। জাতির বীর সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সেবা পাওয়ার দাবি রাখেন। তিনি সিএমএইচ-এ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রাধিকারভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। ওই দুই এমপি’র পর বৈঠকে এর বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন যশোর-২ আসনের এমপি নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল সরকারি হাসপাতালে প্রাধিকারের ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি কমিটিকে জানান যে, মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।

 বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, বিশেষায়িত ২২টি হাসাপাতালসহ দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন। ফলে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা প্রদানকারী জনবল বৃদ্ধি ব্যতিরেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সেবার প্রাধিকারভুক্ত করার যৌক্তিকতা নেই মর্মে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে জীবিত ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। তারা সবাই সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার প্রাধিকারভুক্ত করা হলে সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিজিএমএস মহাপরিচালক বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যখনই কোনো মুক্তিযোদ্ধা সিএমএইচ-এ চিকিৎসার জন্য আসেন তখনই চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাদেরকে কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। পরিবারের সদস্যগণসহ তারা সিএমএইচে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। সিএমএইচ-এ জনবলের সংকট রয়েছে। বর্তমানে সিএমএইচ-এ চিকিৎসা প্রদানকারী জনবল রয়েছে ৫,৫৯০ জন। সশস্ত্র বাহিনীতে এডহক ভিত্তিতে নতুন নতুন ভিভিশন/ইউনিট/প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার জন্য সিএমএইচ’র জনবল বৃদ্ধি করা হয়নি।

 সিএমএইচ’র জনবল বৃদ্ধি করে ৭,৭৯০ জন করার প্রস্তাব করা হয়েছে যা সেনাসদরে বিবেচানধীন রয়েছে। সকল মুক্তিযোদ্ধার সিএমএইচ-এ চিকিৎসা প্রাধিকৃত করলে যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি করোনা পজিটিভ হয়ে অসুস্থ থাকায় কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান। ওই বৈঠকে ৭জন এমপি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, প্রতিরক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম, সেনাবাহিনীর এমজিও মেজর জেনারেল আবু সাঈদ সিদ্দিক, নৌবাহিনীর সহকারী নৌপ্রধান (অপারেশন্স) রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক, সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিকল্পনা) এয়ার ভাইস মার্শাল এএইচএম ফজলুল হক, সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সৈয়দ তারেক হোসেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মহাপরিচালক (সিএমআর) কমডোর মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাহিদুল ইসলাম খান, সামরিক ভূমি ও ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুব আলম তালুকদার, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর পরিচালক লে. কর্র্নেল আবদুল্লাহ ইব্‌নে জায়েদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status