বাংলারজমিন
হাটহাজারীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাঙচুরের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৫ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভাঙচুর করা হয়েছে। নিজের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ না দেয়ায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলমের নির্দেশে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার বিকালে হাটহাজারী আদর্শগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, গালিগালাজ করতে করতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিন ফুট গাঁথুনির একটা কাঁচা দেয়াল পা দিয়ে লাথি মেরে ভেঙে ফেলছেন এক ব্যক্তি। সাদা পাঞ্জাবি পরা এই ব্যক্তিকে এ সময় বেশ উত্তেজিত অবস্থায় দেখা যায়। সে সময় তাকে প্রকল্পে কাজ করা এক মিস্ত্রিকে চড় মারতেও দেখা যায়। সূত্র জানায়, ভাঙচুর চালানো এই ব্যক্তির নাম আনোয়ার মেহেদী। তিনি স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এ ছাড়া তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলমের অনুসারী। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙচুরের সময় ঘটনাস্থলে স্বয়ং উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু সেই ভিডিওতে তাকে দেখা যায়নি। তবে এই ভিডিওতে থাকা আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তারা হলেন- হাটহাজারী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা মনি, আনোয়ার মেহেদী, আইয়ুব খান লিটন, চেয়ারম্যানের পিএস রাশেদ। এ সময় তাদেরকে উত্তেজিত অবস্থায় দেখা যায়। স্থানীয় রাজনীতিতে তারা সবাই উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলমের অনুসারী বলে পরিচিত। এদিকে মানবজমিনের হাতে আসা আরেকটা ভিডিওতে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ ঘুরে ঘুরে দেখছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম। তার সঙ্গে আছেন ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে থাকা মেহেদীসহ সবাই। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তারা যে পোশাকে ছিলেন, চেয়ারম্যানের পরিদর্শনের সময়ও তাদের সবাইকে একই পোশাকে দেখা যায়। যে কারণে ওই ভাঙচুরের সময় উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। ওই সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম চলমান এই প্রকল্পের কাজ নিজের পছন্দের ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ার মুহিবকে দিতে চেয়েছিলেন। তবে ইউএনও নিজেই প্রকল্পটি তদারকি করায় সেটা আর পারেননি উপজেলা চেয়ারম্যান। যে কারণে কাজে গাফিলতি ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দেয়ার অভিযোগ তুলে তিনি ইউএনওকে বিতর্কিত করতে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম মানবজমিনকে বলেন, ‘শুনেছিলাম নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দেয়ায় সংক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি সেখানে ভাঙচুর চালিয়েছে। সেখানে আমার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সত্য নয়। ভাঙচুর চালানোর বিষয়টি জানার পর আমি নিজেই ইউএনও সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। এই ঘটনায় যে জড়িত থাকবে তাকে ধরে প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা আমি নিজেই করবো। ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিককে মারধর করা মেহেদীকে নিজের অনুসারী বলে অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যে কেউ রাজনীতি করতে পারেন। তাই বলে তার কোনো অপরাধের দায়ভার তো আমি নিতে পারি না। আর সেই যদি আমার অনুসারী হয়, তাহলে পুরো হাটহাজারীবাসী আমার অনুসারী। এদিকে এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিদুল আলম বলেন, ‘কী বিষয়ে ফোন দিয়েছেন সেটা আমি বুঝেছি। তবে আমি এখন একটা প্রোগ্রামে আছি। আপনাকে ঠিক ৩০ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি। তখন সব বলবো।’ তবে এরপর তিনি আর ফোন দেননি। এ ছাড়া ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেন নি।