প্রথম পাতা
মোহাম্মদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা
জামিনে বের হয়ে সরকারি কর্মচারীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রবিবার
মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম ওরফে আদম ব্যাপারী সেলিম। গত বছরের ৪ঠা আগস্ট মোহাম্মদপুর এলাকার ময়ূর ভিলার সামনে ছেলে মো. জাহিদকে (১৮) গুলি করার ঘটনায় ১৬ই অক্টোবর মা করিমন নেসা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সেই মামলার ১৩ নম্বর আসামি সেলিম। দেড়মাস আগে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে সেলিমকে আটক করে পুলিশের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে এসে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। দিনে দুপুরে বাসায় ঢুকে সরকারি অফিসের এক গাড়ি চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন এই আদম ব্যাপারী। মাথায়, দুই হাতে, পায়ে, বুকে এলোপাতাড়ি কোপ খেয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড এনেক্স/ আইসোলেশন সেন্টারের ভায়োলেট-২১ নম্বর বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন দুই সন্তানের জনক হারুন অর রশিদ।
প্রতক্ষদর্শী ও রশিদের ভাগিনা জুবায়ের ইসলাম মানবজমিন’কে বলেন, আমার মামা হারুন অর রশিদ ধানমণ্ডি জোনের এসিল্যান্ডের অফিসে গাড়িচালকের চাকরি করেন। আমরা মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান এলাকায় বসবাস করি। ঢাকা উদ্যান এলাকার পাবলিক স্কুলের পাশে খাল পাড়ে কিছু সরকারি খাস জমি রয়েছে। আনুমানিক ৯ কাঠা হবে। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ওই জমিটা দখল করে রেখেছিল সেলিম। সম্প্রতি ওই জায়গাটা সরকারের পক্ষ থেকে দখলমুক্ত করে চারপাশে দেয়াল দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়- ‘এটা সরকারি জমি, এখানে ভূমি অফিস হবে’। এরপরই ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর মামলায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে সেলিমকে আটক করে। জেলে যাওয়ার পর সেলিম একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সন্দেহ করে- হারুন অর রশিদই তাকে আটক ও জমি উচ্ছেদের ঘটনায় জড়িত। এরই প্রেক্ষিতে সেলিম কারাগারে থাকাকালীন তার লোকজনকে হুঁশিয়ারি দেয়- জেল থেকে বের হয়েই রশিদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবে। যেই কথা সেই কাজ। জামিনে বের হয়েই সেলিম তার গাড়িরচালক ইকবাল হোসেন, বাড়ির দারোয়ান মাসুম, হান্নান, সোহান, আবুল বাশার, শাহ আলম, আল আমিন, মোন্নাফসহ ১০ থেকে ১৫ জনকে নিয়ে বুধবার দুপুরে আমাদের বাসায় ঢুকে লিফটের সামনে এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। সেদিনের বর্ণনা দিয়ে জুবায়ের বলেন, আমি আর মামা (হারুন অর রশিদ) সেদিন ঢাকা উদ্যান পানির পাম্প এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিলাম। মামা বললো তোর মামিরা দেশে গেছে, চল বাসায় যাই। আনুমানিক তখন দুপুর ১২টা হবে। আমি আর মামা বাসার নিচতলায় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ চাপাটি, ছুরিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে সেলিম বাহিনী আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমি তখন সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে দৌড় দিই। আর মামা পার্কিং এর দিকে দৌড় দেয়। আমার পেছনে কয়েকজন আর মামার পেছনে কয়েকজন অস্ত্র হাতে তাড়া করে। আর কয়েকজন ছিল মেইন গেটের সামনে। আমি ওপরে ওঠে যাই, আর মামা ভবনের অফিসের মধ্যে আটকা পড়ে। ওই অফিসের ভেতর ঢুকে তারা এলোপাতাড়ি কোপানো শুরু করে মামাকে। আমি চিল্লায়ে চিল্লায়ে তখন সকলকে ডাকছিলাম। তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে মামাকে মৃত ভেবে তারা রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে চলে যায়। যাওয়ার সময় বাসার সিসি ক্যামেরা খুলে নিয়ে যায় তারা। পরে আমি একা রক্তাক্ত মামাকে রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। এখানো তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার মাথার হাড় কেটে গেছে। মাথার খুলি খোলা রয়েছে। ডান হাতের মাঝের আঙুল পড়ে গেছে। দুই হাতে, বুকে, পায়ে অসংখ্য ধারালো অস্ত্রের আঘাত। ডাক্তার বলেছে- কখন কী হয় কিছুই বলা যাচ্ছে না।
শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভুক্তভোগী হারুন অর রশিদ মানবজমিন’কে বলেন, আমার কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। সত্যি আমি সেলিমের ধরিয়ে দেয়ার বিষয়ে কিছুই জানি না। তার দখল করা জমি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে দেয়াল দেয়া, ভূমি অফিসের সাইনবোর্ডও অফিসের লোক লাগিয়েছে। আমি সামান্য গাড়িচালক। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। এরপরও আমাকে এইভাবে কোপানো হলো। যারা আমার সন্তানদেরকে এতিম করতে চেয়েছিল আমি তাদের বিচার চাই। একইসঙ্গে ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো একজন অপরাধী আটকের পর কীভাবে এতো তাড়াতাড়ি কারাগার থেকে ছাড়া পায় তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
আহত হারুন অর রশিদের স্ত্রী অফিজা খাতুন বলেন, আমার স্বামীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আমি বাদী হয়ে শুক্রবার মোহাম্মদপুর থানায় মামলা (মামলা নং-৫৭) করেছি। তিনি বলেন, সেলিমের সঙ্গে কখনোই আমার স্বামীর কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। সেলিম খারাপ মানুষ, আদম ব্যাপারী বলে তার সঙ্গ সকলেই এড়িয়ে চলে। এরপরও বাসায় ঢুকে আমার স্বামীকে কোপানো হলো। অশ্রুশিক্ত হয়ে তিনি বলেন, মৃত ভেবে আমার স্বামীকে ফেলে রেখে গিয়েছিল। আল্লাহ নিজে হাতে তাকে রক্ষা করেছেন। আমি এই সেলিমসহ তার লোকজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একইসঙ্গে বলবো- ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর যারা সরাসরি ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছিল তারা যেন সহজেই জামিন না পায় সেদিকেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, হারুন অর রশিদকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আমাদের থানায় মামলা হয়েছে। সেলিম ও তার বাহিনীকে আটক করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীরা আইনের আয়তায় চলে আসবে।
পাঠকের মতামত
শীর্ষ পাঠায়ে Devil Hunt দরকার
অনেক প্রত্যাশা করেছিলাম সরকারের কাছে।। কিন্ত প্রাপ্তি একেবারেই কম।।জাতির প্রতিটি মানুষ ই ★**
This time put this criminal to Aina Ghar.
খুনীরা কিভাবে জামিন পায়, বিচারকরা কি গৎবাঁধা কাজ করে?