বিশ্বজমিন
আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, গাজা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র
মানবজমিন ডেস্ক
(১ মাস আগে) ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:৩৪ অপরাহ্ন

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ বিষয়ে এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। বলেছেন, আইসিসি হলো একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান। তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলকে টার্গেট করে অবৈধ ও ভিত্তিহীন পদক্ষেপ নেয়। তার এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে আর্থিক দিক। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অথবা মিত্রদের কারো বিরুদ্ধে আইসিসি যদি তদন্ত করে, আর সেই তদন্তে যদি কেউ সহযোগিতা করে তবে সেই ব্যক্তিবিশেষ ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ভিসায় বিধিনিষেধ দেয়া হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এখানে উল্লেখ্য, গাজায় গণহত্যা চালানোর জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাসের এক নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করেছে আইসিসি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। তাহলে এসব গণহত্যা থেকে কি নেতানিয়াহুকে বাঁচাতে ট্রাম্প এমন উদ্যোগ নিয়েছেন! এমন প্রশ্ন মানুষে মুখে মুখে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফর করার সময়ই এসব পদক্ষেপ নেন ট্রাম্প। বিবিসি লিখেছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। আইসিসির অবস্থান নেদারল্যান্ডে। তারা ট্রাম্পের ওই নির্দেশের নিন্দা জানিয়েছে। এক্সে দেয়া এক পোস্টে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেলদকাম্প বলেন, দায়মুক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যাবশ্যকীয় কাজ করে এই আদালত।
ওদিকে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে একটি মেমো প্রচার করো হয়। তাতে একই সঙ্গে হামাস ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাকে ‘লজ্জাজনক নৈতিক সমতা’ আনার অভিযোগে আইসিসিকে অভিযুক্ত করা হয়। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আইসিসির সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো বিপজ্জনক। এটা মার্কিনিদের জন্য বিপজ্জনক। এর মধ্য দিয়ে মার্কিনিদের হয়রানি, নির্যাতন ও সম্ভাব্য গ্রেপ্তারির বিষয় রয়েছে। এই হীন আচরণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলা হচ্ছে। খর্ব করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা, মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি, ইসরাইলসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে কাজকে।
উল্লেখ্য, আইসিসির সদস্য দেশ নয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কোনো কর্মকর্তা বা নাগরিকদের বিষয়ে এই আদালত কোনো রায় দিলে তাকে বার বার প্রত্যাখ্যান করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরান ও ইসরাইলবিরোধী গ্রুপগুলোকে উপেক্ষা করে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে এই আদালত সীমাবদ্ধ করছে বলে অভিযোগ করেছে হোয়াইট হাউস। ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা কোনো যুদ্ধাপরাধ করছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত করছিলেন আইসিসির কর্মকর্তারা। যেসব কর্মকর্তা এটা করছিলেন তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সময় সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
আইসিসির সদস্য দেশের সংখ্যা কমপক্ষে ১২০টি। এর মধ্যে আছে অনেক ইউরোপিয়ান দেশ। নেই যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইল। যখন কোনো দেশ কোনো ঘটনার বিচার করতে পারে না বা করবে না, তখন মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হলো আইসিসি। নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল উভয় দেশেই সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রের উন্নতি ঘটাচ্ছে। তারা কঠোরভাবে যুদ্ধের আইন মেনে চলে। কিন্তু ক্ষমতার শেষ সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। আদালতের এ কর্মকাণ্ডকে তিনি আপত্তিকর বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে কোনো সমতা নেই।
গত মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রাম্প। তারপর তিনি সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। তাতে তিনি গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেয়ার পরিকল্পনা জানান। গাজায় বসত গড়া ফিলিস্তিনিদের কোথায় পুনর্বাসন করা হবে তাও বলেন। একই সঙ্গে গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা বানানোর ঘোষণা দেন। তার এ পরিকল্পনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে আরব জাহানে। আরব নেতারা, জাতিসংঘ এ ধারণার কড়া নিন্দা করেছেন। কিন্তু তা কানে তোলেননি ট্রাম্প। তিনি তার ট্রুথ সোশ্যালে বৃহস্পতিবার একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, যুদ্ধের শেষে ইসরাইল গাজা উপত্যকাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে। ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে। তবে কোনো মার্কিন সেনা সেখানে মোতায়েন হবে না।
ওদিকে বুধবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিত বলেছেন, যেকোনো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হবে অস্থায়ীভিত্তিতে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য গাজাবাসীকে সরে যেতে হবে। এ সময় সেখানে পুনর্গঠন কাজ করা হবে। গাজাকে পুনর্গঠনে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে উল্লেখযোগ্য বলে প্রশংসা করেছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বৃহস্পতিবার তার সেনাাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন গাজাবাসীকে স্বেচ্ছায় বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে। তিনি আরও বলেছেন, এই পরিকল্পনার মধ্যে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে তারা গাজা ছাড়তে পারবেন।
ওদিকে ক্যাপিটল হিলে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট পার্টির নেতাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করছিলেন নেতানিয়াহু। এমন সময় নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে ট্রাম্পকে একটি স্বর্ণালি পেজার উপহার দিয়েছেন নেতানিয়াহু। গত বছরের সেপ্টেম্বরে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপারেশনের একটি স্বারক এই পুরস্কার।
পাঠকের মতামত
Gaza will see another Blood Shed. Hopefully World is in the Brink of WW III.