ঢাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

গোখাদ্য-রাসায়নিক মিশ্রিত ভেজাল গুড়ে সয়লাব লালপুর

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) থেকে
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার

খাঁটি গুড়ের চেয়ে ভেজাল গুড় মানুষ খায় বেশি। দামে কম, ক্রেতা বেশি। খরচ কম, লাভ বেশি। এক সময় গুড়ের চেয়ে চিনির দাম বেশি ছিল। আর ইন্ডিয়ান এলসি করা গোখাদ্য চিনির পচা সিরা তখন পাওয়া যেতো না। তাই কেউ গুড়ে চিনি দিতো না। যা গুড় হতো সবই ছিল খাঁটি। এখন চিনির চেয়ে খেজুর গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় প্রতি কেজি চিনিতে ৫০ টাকা লাভ হয়। ইন্ডিয়ান পচা চিনিতে লাভ আরও বেশি। সবার দেখাদেখি আমিও করছি। তবে অন্যদের মতো রং ও হাইড্রোজ (সোডিয়াম হাইড্রো-সালফাইট) দিই না। কথাগুলো অবলীলায় বলছিলেন লালপুরের নজরুল গাছি। নাটোরের লালপুরে এভাবেই কমপক্ষে ৪ হাজার গাছি খেজুরের ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। 
দুড়দুড়িয়ার গুড় ব্যবসায়ী টেংরা জানান, চিনির সিরা দিলে গুড় খাঁটি গুড়ের চেয়ে বেশি শক্ত ও দানাদার হয়। সহজে ভাঙে না। অন্যদিকে, খাঁটি গুড়ের দানা হয় মোলায়েম ও চিকন। মুখে দিলে সহজে গলে যায়। রং দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভেজাল গুড়ে লাল ও কমলা রং মিশানো হয়। তবে কয়েকদিন পর সেই গুড়ের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। এ ছাড়া গুড় উজ্জ্বল ফর্সা দেখাতে চুন, ফিটকিরি ও হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়।
আমিনুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার এলাকায় খেজুর গাছের রসের সঙ্গে রং, চিনি, ফিটকিরি, গোখাদ্য সুগার মিলের লালি ও ভারতীয় মেয়াদোত্তীর্ণ চিনির পচা সিরা ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে প্রকাশ্যে ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছে। দেখার কেউ নেই।
উপজেলার রাস্তাগুলোতে দেখা যায়, শত শত ভ্যান খোলা টিনের কোটায় ইন্ডিয়ান চিনির দুর্গন্ধময় পচা সিরা নিয়ে যাচ্ছে। আড়বাবের এক ভ্যানচালক বলেন, তিনি লালপুর বাজার থেকে চিনির সিরা ভর্তি টিনের কোটাগুলো আনছেন, পৌঁছে দেবেন বিভিন্ন আড়তদারদের কাছে। এ সময় দেখা যায়, টিনের কোটাগুলোর ঢাকনা নেই। গায়ে উৎপাদন, মেয়াদ ও মূল্য সম্বলিত কোনো লেবেল নেই। দেখা যায়, উপজেলায় এখন প্রতিটি বাজারেই চিনির এই সিরা বিক্রির ডিলার আছে। এ বিষয়ে সালামপুর বাজারের ব্যবসায়ী সুমন বলেন, আমি গোখাদ্য হিসেবে ইন্ডিয়ান চিনির সিরা বিক্রি করি। অনেক সময় গাছিরা আমাদের থেকে সরাসরি এই সিরা কিনে থাকেন। তারা কী কাজে এই সিরা ব্যবহার করেন জানা নেই।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুজ জাহের বলেন, এসব গুড় খেলে কিডনি ও লিভার অকেজো হওয়া, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ শিশুদের চিন্তাশক্তি হ্রাস পাবে। দীর্ঘদিন এসব গুড় খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (নাটোর) সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, আমি নাটোর জেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি অবহিত ছিলাম না। দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান মানবজমিনকে জানান, উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া তিনি এলাকার মানুষকে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা সম্পর্কে তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।

 

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status