বাংলারজমিন
কমলনগরে অস্তিত্ব সংকটে জারিরদোনা খাল
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারলক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজারে অবস্থিত জারিরদোনা খালের সংযোগ খালটি দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বহুতল ভবন এবং দোকানপাট নির্মাণ করায় সেটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছর আগে ৮০ জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা হলেও নেই কোনো অগ্রগতি। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এ খাল দখল করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মতে, যে খাল দিয়ে এক সময়ে পণ্যবাহী নৌকা চলতো, সে খাল এখন সংকুচিত হয়ে নালায় রূপ নিয়েছে। খালের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উপজেলার হাজিরহাট, চরফলকন, চর জাঙ্গিলিয়া, জাজিরাসহ আশপাশের বাসিন্দারা অবৈধ দখলদার, হাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি এ খাল দিয়ে প্রবেশ করতো এবং অতিবৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নেমে যেতো। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খাল সংলগ্ন ফসলি জমিতে খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করা হতো। আর জোয়ারের সঙ্গে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খালে এসে পড়তো। কিন্তু খালের উত্তর অংশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রশস্ত হলেও এখন খালটি কোনো কাজেই আসছে না। এলাকার বৃষ্টির পানি এখন আর এ খাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ নেই, আর খাল দিয়ে নদী থেকে পানি আসারও সুযোগ নেই। তাদের অভিযোগ, গত ১৫-২০ বছর ধরে হাজিরহাট বাজারে থাকা খালপাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় নদীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাজারের অংশের খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হাজিরহাট বাজারের অংশের এ খালে ১১টি বহুতল ভবন এবং ৬৯টি আধাপাকা ও টিনশেড ঘর রয়েছে। সরজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার সীমান্ত এলাকা আলেকজান্ডারের বালুরচর এলাকার জারিরদোনা খাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ওপর থাকা সøুইস গেটের উত্তর অংশ থেকে সংযোগ খালটি শুরু। এটি উত্তরমুখী হয়ে খায়েরহাটে ইউনিয়ন দিয়ে হাজিরহাট বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে বাজারের উত্তর দিক থেকে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে পূর্ব দিকে উপজেলা পরিষদের পাশে গিয়ে শেষ হয়। খালের উত্তর অংশ এবং দক্ষিণ অংশে পূর্বের অবস্থানে থাকলেও হাজিরহাট বাজার সংলগ্ন খালের মাঝখানের অংশটির তেমন কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাতায়াতের জন্য খালের ওপর অপরিকল্পিতভাবে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ভবনে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনের বাসিন্দাদের ব্যবহৃত বজ্য-আবর্জনা এসে পড়ছে খালটিতে।
কমলনগর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজ বলেন, খাল উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। বরং তাদের গাফিলতির কারণে দিন দিন অবৈধ দখলদাররা খালকে গিলে খাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, হাজিরহাটে জারিরদোনা শাখা খালটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এ খালের ওপর থাকা অবৈধ ৮০ জন দখলদারদের একটি তালিকা সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে। অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া আছে। খুব শিগগিরই সেখানে অভিযান চালিয়ে খালটি দখলমুক্ত করার কথা জানান তিনি।