ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

সিরিয়ার সেদনায়া কারাগারে হাজারো মানুষের ভিড়, খোঁজ নেই প্রিয়জনদের

মানবজমিন ডেস্ক

(১ মাস আগে) ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

mzamin

কারাগারে প্রিয়জনের খোঁজে এক নারী । ছবি- এপি

সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে সেদনায়া নামক গোপন সামরিক কারাগার। কুখ্যাত এই কারাগারে জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার সিরিয়ার নাগরিক। তারা খোঁজ নিচ্ছেন আসাদ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তাদের প্রিয়জনেরা এখনও সেখানে রয়েছেন কি-না। কিন্তু তারা হতাশ হচ্ছেন। কেননা যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের অনেকেরই কারাগারে কোনো চিহ্ন নেই। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি বলছে, সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের পর হাজার হাজার জনতা প্রথম যে স্থানটিতে ছুটে যায় সেটি হচ্ছে সেদনায়া কারাগার। দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক শাসনে পিষ্ট হওয়ার পর প্রিয়জনদের খোঁজে আসাদের ওই কুখ্যাত কারাগারটির গোপন বন্দিশালায় প্রবেশ করে জনগণ। এই কারাগারের ভয়াবহতার জন্য এটি ‘কসাইখানা’ নামেও পরিচিত ছিল। গত দুই দিন ধরে দামেস্কের অনতিদূরে অবস্থিত গোপন কারাগারটিতে কয়েক দশক ধরে নিখোঁজ থাকা প্রিয়জনদের খোঁজে জড়ো হচ্ছেন সিরিয়ার বহু নাগরিক। তবে কারাগারের ফটকগুলো ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হতাশায় মূক হয়ে পড়েন অনেকেই। তারা বলছেন, তাদের মনে হয়েছে তারা অন্ধকার কোনো গুহায় প্রবেশ করেছেন। তাদের আশা ছিল তারা সেখানে প্রিয়জনদের মুখগুলোর খোঁজ পাবেন। কিন্তু সেখানে নিস্তব্ধ আর অন্ধকার কক্ষ ছাড়া কিছুই নেই। 

রোববার বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখলের পর সেদনায়া সামরিক কারাগার থেকে মাত্র কয়েক ডজন মানুষকে মুক্ত করা হয়। এরপর সেখানে আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

গদা আসাদ নামের এক নারী প্রিয়জনের খোঁজে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন সবাই কোথায়? কোথায় আমাদের সন্তানরা? নিজের ভাইকে খুঁজে পাওয়ার আশায় অসাদ সরকারের পতনের পর দামেস্কের বাড়ি থেকে রাজধানীর উপকণ্ঠে কারাগারে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। 

গদা বলেছেন, তার ভাইকে ২০১১ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় তার ভাই আসাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ায় তাকে আটক করে আসাদ বাহিনী। এরপর থেকে তিনি আর ভাইয়ের খোঁজ জানেন না। ওই নারী বলেন, বিগত ১৩টি বছর ধরে আমার হৃদয় জ্বলছে। আমি ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।কান্নায় জর্জরিত এই নারী বলেন, গত সপ্তাহে যখন বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখলে নেন তখন আমি প্রার্থনা করছিলাম তারা যেন দামেস্কে পৌঁছান এবং কুখ্যাত এই কারাগারটি উন্মুক্ত করেন। 

প্রিয়জনদের খোঁজ নিতে আসা লোকজনকে সহায়তাকারী সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারাও সেখানে কোনো বন্দি না থাকায় হতাশ হয়েছেন। তবে এর কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেননি তারা। প্রিয়জনদের খোঁজে আসা অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়েছেন। সেদনায়া কারাগার আসাদ সরকারের নৃশংসতার প্রতীক বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, রাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্রে এমন কারাগার থাকা সিরিয়ানদের ওপর বর্বর নৃশংসতার উজ্জ্বল প্রমাণ। 
আসাদের শাসনামলে ২০১১ সালে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর আটক হওয়াদের সেদনায়া কারাগারে বন্দি রাখার ইঙ্গিত ছিল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুমান বলছে, ২০১৭ সালে ১০ থেকে ২০ হাজার বন্দিকে আটক রাখা হয়েছিল আসাদের ওই কুখ্যাত কারাগারটিতে। কার্যকরভাবে এদের সকলকেই নির্মূলের জন্য আটক করা হয়েছিল বলে ধারণা মানবাধিকার সংস্থাটির।
মুক্ত হওয়া বন্দি এবং কারা কর্তৃপক্ষের বরাতে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, কারাগারের অভ্যন্তরে গণহত্যায় নিহত হয়েছে অন্তত কয়েক হাজার বন্দি। প্রতিনিয়ত কারাবন্দিদের ওপর চালানো হতো ভয়াবহ নির্যাতন। এছাড়া প্রচণ্ড মারধর ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে অনেক কারাবন্দি। প্রায় প্রতিদিনই এমন বর্বরতা চালাত কারারক্ষীরা। নির্মম এই অত্যাচারেও অনেক বন্দির মৃত্যু হয়েছে। দিনের পর দিন তাদের অভুক্ত রেখে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

সিরিয়াতে এমন কোনো ঘর নেই বা এমন কোনো নারী নেই যিনি তার ভাই, সন্তান, স্বামী বা পরিবারের অন্য কাউকে না হারিয়েছে। এমনটি বলছিলেন আসাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হওয়া ৫৪ বছর বয়সী খায়রিয়া ইসমাইল নামের এক ব্যক্তি। বিক্ষোভের প্রথম দিকে তার দুই ছেলেকে আটক করা হয়। যাদের একজন এখনও নিখোঁজ।

২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় আটক বা নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখে পৌঁছেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। যাদের কয়েক হাজার বন্দিকে সেদনায়া কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। তবে এই কারাগারে রাখা অনেক বন্দিরই কোনো হদিশ পায়নি ভুক্তভোগী পরিবার।


 

পাঠকের মতামত

আল্লাহ্ আমাদের হেফাজত করেছেন বাংলাদেশের বাশার থেকে।

আছিফ
১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন

সব স্বৈরশাসকের চরিত্র বৈশিষ্ট্য স্বভাব একই। বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর স্বৈররাণী শেখ হাসিনার পর সিরিয়ার বাশার আল আসাদের চরিত্রেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে। এরা মানবতা বিরোধি সভ্যতা বিরোধি আইন বিরোধি এক জঘন্য নরঘাতক নরপশুর তুল্য ক্ষমতা খেকো প্রাণী। বিশ্বের দেশে দেশে এখনো অনুরূপ স্বৈরশাসকদের বিচরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যাশা করি বাংলাদেশ আর সিরিয়া থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে জন বিস্ফোরণের মাধ্যমে এভাবেই সব স্বৈরাচার তার কৃতকর্মের পরিণতি ভোগ করবে তাতে বিশ্বে মানবতা সভ্যতা ফিরে আসবে। বিশ্ব হবে এক বাসযোগ্য আবাসভূমি।

আকাশ
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২:১৫ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status