বিশ্বজমিন
বিবিসির রিপোর্ট
‘আমাকে বন্দুকের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছিল’
অরুনোদয় মুখার্জি
(১ দিন আগে) ৫ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:৪২ অপরাহ্ন

সোনা বানু এখনও আতঙ্কে কেঁপে ওঠেন যখন গত কয়েক দিনের ঘটনা মনে পড়ে। ৫৮ বছর বয়সী এই নারী ভারতের উত্তর-পূর্ব আসামের বরপেটা জেলার বাসিন্দা। তিনি জানান, গত ২৫ মে তাকে স্থানীয় থানায় ডেকে পাঠানো হয় এবং পরে বাংলাদেশ সীমান্তের এক পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ও আরও প্রায় ১৩ জনকে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি জানান, কেন তাকে পাঠানো হলো, তা জানানো হয়নি। তবে এটি এমন এক পরিস্থিতি ছিল যা তিনি দীর্ঘদিন ধরে আশঙ্কা করছিলেন। সোনা বানুর দাবি, তিনি সারা জীবন আসামেই থেকেছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, তিনি ভারতীয় নাগরিক, কোনো অবৈধ বাংলাদেশি নন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোনা বানু বলেন, তারা বন্দুক ঠেকিয়ে আমাকে ঠেলে দেয়। আমি দুই দিন খাবার ও পানি ছাড়াই এক ফাঁকা মাঠে হাঁটু সমান পানিতে ছিলাম। সেখানে মশা ও জোঁকে ভরা ছিল।
সেই দুই দিন তিনি ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ‘নো-ম্যানস ল্যান্ড’-এ কাটান। তারপর তাকে বাংলাদেশের এক পুরনো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তিনি। সেখানেও দুই দিন থাকার পর, বাংলাদেশি কর্মকর্তারা তাদের সীমান্ত পার করিয়ে ফের ভারতের হাতে তুলে দেন। কেন তাকে প্রথমে বাংলাদেশে পাঠানো হলো এবং পরে ফিরিয়ে আনা হলো, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে তার ঘটনা আসামে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার মধ্যে একটি, যেখানে ‘বিদেশি ট্রাইবুনাল’ কর্তৃক ‘বিদেশি’ ঘোষিত ব্যক্তিদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
বিবিসি অন্তত ছয়টি এমন ঘটনার কথা জানতে পেরেছে, যেখানে মানুষ অভিযোগ করেছেন তাদের স্বজনদের এইভাবে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ), আসাম পুলিশ ও রাজ্য সরকার বিবিসির প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
ভারতে ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ দমন নতুন নয়। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪,০৯৬ কিমি দীর্ঘ এবং অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে অরক্ষিত। তবে আইনজীবীরা বলছেন, কাউকে হঠাৎ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া- এটা এখনো বিরল ঘটনা। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে এমন ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের মতে, মে মাসে ভারত থেকে অন্তত ১,২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে বাংলাদেশ ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, তারা এমন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। আসামে এই ইস্যু অনেক বেশি সংবেদনশীল, কারণ এখানকার রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব ও জাতিগত পরিচয়ের বিষয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি)-র তালিকায় ২০১৯ সালে প্রায় ২০ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে। এদের অনেককে বন্দী শিবিরে রাখা হয়, বাকিরা উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। সোনা বানু জানান, তার মামলা এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তবুও তাকে জোর করে দেশছাড়া করা হয়েছে। এমনই এক ভুক্তভোগী ৬৭ বছর বয়সী মালেকা খাতুন, যিনি এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, এখানে আমার কেউ নেই।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি বলেছেন, যাদের ‘বিদেশি’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং যারা কোনো আদালতে আপিল করেনি, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তবে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, এসব ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ‘ইচ্ছাকৃত অপব্যাখ্যা’ করা হয়েছে। এমনই এক পরিবারের সদস্য সঞ্জিমা বেগম জানান, তার পিতাকে ভুল পরিচয়ের কারণে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করা হয়। তার পিতার নাম আব্দুল লতিফ, দাদার নাম আব্দুল সুবহান। কিন্তু নোটিশে লেখা ছিল, “আবদুল লতিফ, পিতা শুকুর আলী”, যাকে তারা চেনেন না।
আরেক ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম, যিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তাকেও একই সময়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার স্ত্রী রিতা খাতুন বলেন, প্রতিটি কাগজে প্রমাণ আছে যে আমার স্বামী ভারতীয়। তবু সেটি যথেষ্ট ছিল না। বর্তমানে যারা ফিরে এসেছেন, তারাও আতঙ্কে আছেন- আবার কখন তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘আমরা খেলনা নই’- বলেন সঞ্জিমা বেগম। ‘এরা মানুষ, এভাবে ইচ্ছামতো ছুঁড়ে ফেলা যায় না।’
(বিবিসি থেকে অনুবাদ)
পাঠকের মতামত
এই ভারতের হিংস্র নরপশু বিজিপি সরকারের কোন নিতী নৈতিকতা বলতে কিছু নাই।তাকবে কৃমনে যারা গরুর পশ্রাব খায় গুবর খায় এরা কি মানুষের কাতারে পড়ে আমার মনে হয় না।
ভারতীয় মুসলিমদের জেগে উঠা দরকার।