প্রথম পাতা
গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবারগণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমকে সাহসের সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। তথ্যের অবাধ প্রবাহের ওপর গুরুত্বারোপ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সঠিক তথ্য ব্যাপকভাবে প্রচার না হওয়ায় গুজব ও অপ-তথ্যের দ্বারা মানুষ প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও অপ-তথ্য প্রতিরোধে গণমাধ্যমকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের গল্প গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জনস্মৃতিতে রাখতে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
মতবিনিময়ে সিনিয়র সাংবাদিকরা তাদের বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। এ সময় ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা ঠিক না বলে মতামত দেন তারা।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, ওই সময় অনেক গণমাধ্যমকর্মী ভয়ে সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে পারেননি। এখন সেই সময় কেটে গেছে। তিনি ফ্যাসিবাদী সরকারের গুম, দুর্নীতিসহ সব অপকর্মের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকার গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, বিগত রেজিমে সাংবাদিকদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সবার প্রত্যাশা সামনের দিনগুলোতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি আর না হয়। আমরা সবাই মিলে যেন একটি মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে পারি।
গণমাধ্যমের সংস্কার প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার গণমাধ্যমের সংস্কারের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গণমাধ্যমের সংস্কার করা হবে।
টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকপক্ষ তাদের দাবি ও সমস্যাগুলো জানিয়েছেন। যেমন- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের প্রাইস রেগুলেশনের বিষয়ে তারা বলেছেন। পে-চ্যানেলের কথা বলেছেন, বিদেশি চ্যানেলগুলোর বিষয়ে নীতিমালার কথা বলেছেন। এ ছাড়াও তারা টিআরপি’র বিষয়টিও বলেছেন। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আবার তাদের সঙ্গে বসবো। যৌক্তিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশকে নিয়ে গুজব ও অপপ্রচার চলছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অভ্যুত্থান এবং সরকারকে নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের মিডিয়াতেও এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ অপপ্রচার শুধু সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকে নিয়ে যে অপপ্রচার হচ্ছে তার কাউন্টার দেয়ার জন্য এবং প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য আমাদের সরকারসহ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি, সবার মতামত নিয়েছি।
মতবিনিময় সভায় মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল ঠিক নয়। ইতিমধ্যে সিপিজে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরাও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তাদের অনেকেই পেশাদার সাংবাদিক। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
একই বিষয়ে দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, এত বেশি সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে যে এই সংখ্যাটি দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। ঢালাওভাবে এভাবে কার্ড বাতিল করা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে আন্তর্জাতিকভাবেও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সভায় কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, সরকারের দিক থেকে গণমাধ্যমের ওপর কোনো চাপ নেই, এমনকি সামরিক গোয়েন্দাদের তরফ থেকেও কোনো চাপ প্রয়োগ হবে না বলে তারা আশ্বস্ত করেছে।
তিনি বলেন, এই দুই মাসে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ৭৫টি ষড়যন্ত্র হয়েছে। এগুলো বেশ উদ্বেগজনক। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। আমরা কেন তাহলে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি না।
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা স্বভাবতই অনেক বেশি। পত্রিকায় প্রকাশিত সরকারি বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধের সময় কমিয়ে আনার অনুরোধ করেন তিনি।
সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ অনেকগুলো আইন সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
মত বিনিময় সভায় নয়াদিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মর্তুজাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। অন্যান্যের মধ্যে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।