শেষের পাতা
সিরাজগঞ্জের সেই অস্ত্রধারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে
সুজন সরকার, সিরাজগঞ্জ থেকে
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবারবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠ দখলে রাজপথে নামে। গত ৪ঠা আগস্ট দুপুর থেকে সিরাজগঞ্জে পুলিশের পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের দমনে রাজপথে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মাঠে নামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন সংগঠনের ক্যাডাররা। এই ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেলা শহর, রায়গঞ্জ, হাটিকুমরুল, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে এনায়েতপুর থানার ১৫ জন পুলিশ সদস্য ও ২ জন কলেজ ছাত্রসহ ১ ব্যবসায়ী, সদরে ১ জন শিক্ষার্থী, ২ জন যুবদল কর্মী ও রায়গঞ্জে ১ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২৭ জন নিহত হয়েছে।
সূত্র মতে, আন্দোলন ঠেকাতে সিরাজগঞ্জের এসএস রোড, মুজিব সড়ক, ইবি রোডসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে জড়ো হন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শত শত ক্যাডার। সেদিন অত্যাধুনিক সব ধরনের অস্ত্রের মহড়া দেখা গেছে। নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর গুলিসহ মারপিটও করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। সেই সঙ্গে ক্যাডাররা বন্দুক, রিভলবার, পিস্তলসহ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও রাম দা, হকিস্টিক, রডসহ বিভিন্ন ধরনের ধারালো দেশীয় অস্ত্র হাতে হামলা চালায় ছাত্র-জনতার ওপর।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে বারবার বিদেশি সটগান দিয়ে গুলি করছিল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর ভাতিজা ও যুবলীগ নেতা এনামুল হক, পাশেই আরেক যুবলীগ নেতা এমএ মুছা ও করিম মুন্সি গুলি ছুড়ছেন সটগান দিয়ে। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতেও ছিল ছুড়ি, রামদা, রড, ফালা ও লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র। এই সকল অস্ত্রের গুলিতে নিহত হয় যুবদলের তিনজন। প্রকাশ্য দিবালোকে এ সকল অবৈধ অস্ত্রের প্রদশনীর ৩৮ দিন পার হলেও এই অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা। ইতিমধ্যে নিহতের ঘটনায় জেলায় ৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার লোককে। সেদিন আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবহৃত সেই অস্ত্র্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। সেই সঙ্গে এনায়েতপুর ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা থেকে ২৮টি অস্ত্র খোয়া যায়। এরমধ্যে ১৭টি উদ্ধার করা গেলেও ১১টি এখন উদ্ধার হয়নি। খোয়া যাওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধার না হওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষসহ পুলিশ সদস্যরা। এত অস্ত্র বাহিরে রেখে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও রয়েছে চরম আতঙ্কে।
এদিকে, গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর থেকে অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সিরাজগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা, যৌথ বাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসী ক্যাডার, তাদের সহযোগী ও গডফাদারদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের গুলিতে যুবদলের ৩ কর্মী নিহত হয়েছে। অনেকেই আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তাই অবৈধ অস্ত্রগুলো যদি উদ্ধার না হয় তাহলে আমরা নিরাপদ নয়। এ ছাড়াও কয়েকটি থানা থেকে পুলিশের অস্ত্র লুট হয়েছে সেই অস্ত্রগুলো এখনো উদ্ধার হয়নি। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনকে বলবো যারা শিক্ষার্থীদের গুলি করেছে, যুবদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তাদো দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. শামছুল আলম জানান, দুইটি থানা থেকে মোট ২৮টি অস্ত্র আন্দোলনের সময় খোয়া যায়। ইতিমধ্যে ১৭টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১১টি উদ্ধারের জন্য অভিযান চলছে। আশা করি দ্রুত এ সকল অস্ত্র উদ্ধার করতে স্বক্ষম হবো। আন্দোলনের সময় যারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মহড়া গিয়েছে ও গুলি করেছে এসব অস্ত্রধারী অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে।
আওয়ামী ও যুবলীগ পুলিশের অস্ত্র দিয়ে ছাত্র জনতাকে খুন করেছিল। ওদের কোন ছাড় নয়। ধরুন জেলে ভরুন দ্রুত বিচার করুন, ফাঁসি দিন।