বাংলারজমিন
ভোলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ বিভিন্ন ভবন ও গাড়িতে আগুন, নিহত ১
ভোলা প্রতিনিধি
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারভোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জেলা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় ৪/৫ ঘণ্টাব্যাপী শহরে তাণ্ডব চলে। সরজমিন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, রোববার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে জসিম নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তিনি নতুন বাজার এলাকার ছাতা মেরামতের মিস্ত্রি ছিলেন। আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগ অফিস, পৌর ভবন, ডিসি অফিস, এসপি অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থাকা বেশ কয়েকটি সরকারি গাড়ি এবং মোটরসাইকেল। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। এদের ২০ জন ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ৫ জনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনককারীরা সকাল থেকে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইলিশ ফোয়ারার মোড়ে জড়ো হতে থাকে। সকাল ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কালিনাথ রায়ের বাজার হয়ে সদর রোডে আসলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। সেই বাধা অতিক্রম করে সদর রোডের কে জাহান মার্কেটের সামনে গেলে আওয়ামী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং আসবাবপত্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর পরপরই পৌর ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটে।
এরপর হামলা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে আগুন দেয় ও বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভিতরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ১৪টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় বিটিভি’র ভোলা প্রতিনিধির মোটরসাইকেল। এ সময় বাধাহীনভাবে তাণ্ডব চলে। একইসময় এসিল্যান্ড অফিসের একটি সরকারি গাড়িতেও আগুন দেয়ার খবর পাওয়া যায়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার অহিদুর রহমান জানান, আন্দোলনকারীরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে হামলা করে। এ সময় ভবনের সামনে রাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করে। অপরদিকে ভোলার পরাণগঞ্জ বাজার এলাকার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়।
পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশ অ্যাকশনে নেমে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট, সউন্ড গ্রেনেডসহ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা ভোলা খাদ্য অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় নতুন বাজার এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে মানুষের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভোলা পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান জানান, সহিংস হামলার ঘটনায় তিনি নিজেসহ ১০ পুলিশ আহত হয়েছেন।