বাংলারজমিন
উত্তপ্ত চট্টগ্রাম
দিনভর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
৫ আগস্ট ২০২৪, সোমবারসরকার পতনের একদফা দাবিতে চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। উভয়পক্ষই বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা চট্টগ্রাম নগরের নিউ মার্কেট মোড়ে অবস্থান নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিটি কলেজ এলাকা থেকে সশস্ত্র হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা। তাদের পাশাপাশি পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট মোড় থেকে সরে পার্শ্ববর্তী রিয়াজুদ্দিন বাজারের অলিগলিতে অবস্থান নেন। সেখানেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। তাদেরকে সঙ্গ দেন কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য। পরে শুধু শিক্ষার্থীরা কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যান। এরপর তারা নগরের লালদিঘীর পাড়, কদমতলী ও ওয়াসার মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। আর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন নিউমার্কেট মোড়ে।
জানা যায়, সংঘর্ষের সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপকভাবে গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। আর সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়েছেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিসের পেছন থেকে গুলি ছুড়ছে। তার পাশে থাকা আরেকজনকে ককটেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশের নেতৃত্বেও সশস্ত্র ক্যাডাররা শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেছেন।
জানা যায়, সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৫০ জন মানুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শতাধিক মানু?ষ ছিলেন গুলিবিদ্ধ। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭০ জন, ন্যাশনাল হসপিটালে ১০ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি আছেন। পার্কভিউ হাসপাতালে একজনের গায়ে বুলেট ও একজনের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। মারাত্মকভাবে আহতদের মধ্যে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজও রয়েছেন। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. তসলিম উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, নিউমার্কেট, চকবাজার ও ফেনীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত কমপক্ষে ১৭০ জন এখানে ভর্তি আছেন। এদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনতা। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন কওমিপন্থি পটিয়া মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ গুলি চালালে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে ১১ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ছাড়া ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা।