শেষের পাতা
নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র
শান্ত থাকার ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান
মানবজমিন ডেস্ক
২৫ জুলাই ২০২৪, বৃহস্পতিবারবাংলাদেশ পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আবারো বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এদিন তার কাছে নিজেকে নিরানিরা পরিচয় দিয়ে একজন নারী জানতে চান- আমার নাম নিরানিরা। বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমি। গর্বিত বাংলাদেশি মার্কিনি হিসেবে ২৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আমার বসবাস। একটি বিষয়ে কথা বলতে এখানে এসেছি। বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশে যা করা হচ্ছে তা উদ্বেগের বিষয়। আমি জানি সেটা যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগ। সবসময় আমরা সুপারপাওয়ারে বিশ্বাস করি এবং আমি এই দেশে বসবাস করি। আমার প্রশ্ন হলো আমার দেশ বাংলাদেশের জন্য কি আপনার কাছ থেকে কোনো সহায়তা পেতে পারি। জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা অব্যাহতভাবে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। একই সঙ্গে শান্ত থাকার ও উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাই। আগের দিনও বলেছি, যেকোনো রকম সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই আমরা, সেটা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যদি হয়ে থাকে অথবা সরকারি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত ব্যক্তিরাও যদি সহিংসতা করে থাকেÑ তবুও আমরা তার নিন্দা জানাই। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আমাদের সমর্থন আছে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভকে সমর্থন করি। কিন্তু সবক্ষেত্রে সেটা হতে হবে শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ থেকে সরকারের বিরত থাকা উচিত। কিন্তু আমি বলবো যখন বাংলাদেশের বিষয় আসে তখন সারা দেশে চলমান টেলিযোগাযোগে যে বিঘ্ন সৃষ্টির খবর পাচ্ছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই টেলিযোগাযোগে বিঘ্ন ঘটার কারণে মার্কিন নাগরিক সহ বাংলাদেশি জনগণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সক্ষমতাকে সীমিত করা হয়েছে। অন্য দেশের বিষয়েও আমরা একই কথা বলেছি। একইভাবে যখন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসে তখন এর বিরুদ্ধে আমরা কথা বলি। এসব উদ্বেগের বিষয় আমরা অব্যাহতভাবে জানিয়ে যাবো। ম্যাথিউ মিলারের কাছে অন্য একজন সাংবাদিক জানতে চান- গতরাতে আমি জানতে পেরেছি যে, জাতিসংঘের লোগো সংবলিত ট্যাংক ও যান (ভেহিক্যাল) ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতিসংঘের লোগো ‘ইউএন’ সংবলিত ওইসব ব্যবস্থা থেকে গুলি করা হচ্ছে। হত্যা করা হয়েছে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া আকাশে একটি হেলিকপ্টার দেখা গেছে। দেখে মনে হচ্ছে দেশে এক অরাজকতা চলছে। ওদিকে গণঅধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট নুরুল হক, আরেক নেতা তারেক রহমান, আরেক নেতা জুনায়েদ সাকি, অন্য এক নেতা আবু আদনান ত্বহা সহ অনেককে, যাকে পাচ্ছে তাকেই তুলে নিয়ে যাচ্ছে সরকারি বাহিনী। ইন্টারনেট না থাকায়, টেলিফোন যোগাযোগ না থাকার সুবিধা নিচ্ছে তারা। কারণ, কী ঘটছে বাংলাদেশে, তা বিশ্ব দেখতে পাবে না।
আমি জানি ইউরোপ স্যাটেলাইট, মার্কিন স্যাটেলাইট কোনো ছবি নিতে পারেনি ইন্টারনেট না থাকায়। সারাবিশ্বে গণতন্ত্রের এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র। এটাকে সম্মান করি আমরা। কিন্তু পাকিস্তানের জেনারেল অসিম মুনির এবং প্রধান বিচারপতি ফয়েজ ইশার নির্দেশনায় তারা পাকিস্তানের প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। পাকিস্তানি জনগণের পছন্দের কোনো প্রতিফলন নেই। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন বা এক্ষেত্রে কোনো প্রত্যাশা আছে বলে আপনি মনে করেন কি, আপনি কি মনে করেন ওই দেশটি সঠিক পথে আছে?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই বলে আসছে, সবসময়ই করে আসছে তার সর্বোত্তম কাজ। সারাবিশ্বের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কথা বলে। এটা নিশ্চিত করা হয়েছে বা পরিষ্কার করা হয়েছে যে, দেশগুলো তখনই শক্তিশালী হয়, যখন সেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত থাকে। এটা সারাবিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য। আমরা সেটাই অব্যাহত রাখতে যাচ্ছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
পাল্টা প্রশ্নে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের অপারেটিভরা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান সরকারগুলোর কথা শুনছেন, যা করতে বলা হচ্ছেÑ যা করতে বলছেন, তা কি করছে? জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার পরিষ্কার। আমাদের মূল্যবোধ পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের যেকোনো দেশ বা বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশ যা মনে করা উচিত বলে মনে করে বা প্রতিটি পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত- তা কি সব দেশ মানে? অবশ্যই না। কারণ, প্রতিটি সার্বভৌম দেশ তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেয়। তারা এটা করে সবসময়। সবসময় তা করে যাবে। কিন্তু মৌলিক স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার প্রশ্নে সঠিক পথ অবলম্বন করা উচিত এবং আমাদের সব প্রভাব ব্যবহার করে তাদেরকে এই পথে থাকার আহ্বান জানাই। আমরা অব্যাহতভাবে এটাই করে যাবো। আরেক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, জাতিসংঘের লোগো সংবলিত হামভিস এবং ট্যাংক ব্যবহার করে তা থেকে বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি করা হয়েছে এবং তাতে অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন? কেন তারা জাতিসংঘের লোগো ব্যবহার করছেন? ম্যাথিউ মিলার এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, সুনির্দিষ্ট এই রিপোর্টের বিষয়ে আমি অবহিত নই। আমি মনে করি- এ বিষয়টি জাতিসংঘের কাছে জানতে চাওয়া উচিত। কিন্তু আমি বলবো, যেমনটা আমি পরিষ্কার করেছি- শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার নিন্দা জানাই আমরা। প্রতিবাদকারীদেরকে মত প্রকাশের মৌলিক স্বাধীনতা, অবাধে কথা বলার মৌলিক স্বাধীনতা অনুমোদন করা উচিত। একই সঙ্গে আমরা আহ্বান জানাই যে, সব প্রতিবাদ হতে হবে শান্তিপূর্ণ।