শেষের পাতা
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে চরম নাটকীয়তা
মানবজমিন ডেস্ক
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চরম নাটকীয়তা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় এই নাটকীয়তা। মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যায় মিডিয়ার সংবাদ শিরোনাম। ডেমোক্রেটদের মধ্যে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে বাইডেনের সরে যাওয়া বড় রকম প্রভাব ফেলে রাজনীতিতে, প্রচারণায় এবং সংবাদ মাধ্যমে। তিনি শুধু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাই দেননি। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পদে তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে খবর পাল্টে যায়। তারা ফ্লাশলাইট ফেলতে থাকে কমালার ওপর। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন টিভির পর্দায়। স্মরণকালের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে বলে জানা যায় না। একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া কেউ নির্বাচন থেকে সরাতে পারবে না- এমন মনোবল নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে ছিলেন যে বাইডেন, রোববার তিনি সরে দাঁড়ানোর আকস্মিক ঘোষণা দেন। মুহূর্তেই সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে একটানা প্রচার হতে থাকে বাইডেনের পদত্যাগ, সংশ্লিষ্ট খবর ও বিশ্লেষণ। কমালা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সমর্থন দিলেও তিনি এখনো দলীয় মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়নের জন্য আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ে ডেমোক্রেট দলের জাতীয় কনভেনশন। তাতে যদি আরও প্রার্থী বেরিয়ে আসেন তাহলে যে প্রার্থী বেশি ডেলিগেট পাবেন, তিনিই হবেন ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী। সেদিক থেকে এখনো পর্যন্ত কমালা হ্যারিসের পাল্লা ভারী। তিনি ফ্রন্টরানার। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায়। যদি কমালা হ্যারিস দলীয় মনোনয়ন পান, তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় নারী প্রার্থী। এর আগে এ পদে ২০১৬ সালের নির্বাচনে একই দলের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ছিলেন প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম নারী প্রার্থী। তার পরেই ইতিহাসে নাম লেখাবেন কমালা হ্যারিস। সেই সঙ্গে আরও একটি ইতিহাস হবে। তাহলো তিনিই হবেন প্রথম কোনো এশিয়ান বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাকে সমর্থন দেয়ার পর কমালা হ্যারিস বলেন- তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। তার উদ্দেশ্য হলো এই অনুমোদন নিয়ে ডেমোক্রেটদের মনোনয়ন এবং সর্বোপরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় অর্জন করা। অন্যদিকে তাকে নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের এবারের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেনের চেয়ে কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করা তার জন্য অনেক সহজ হবে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার, রিপাবলিকান মাইক জনসন। এরই মধ্যে কমালা হ্যারিসের প্রার্থিতা সমর্থন করেছেন অনেক ডেমোক্রেট। সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার প্রশংসা করেছেন বাইডেনের। বলেছেন, তিনি একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, কমালা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের ডেমোক্রেট দলের সব চেয়ার। সমর্থন দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও সাবেক ফার্স্টলেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস সৃষ্টি করে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সরাসরি কমালা হ্যারিসকে সমর্থন দেননি। সমর্থন দেননি প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার, ডেমোক্রেট ন্যান্সি পেলোসি। তবে তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, সব সময় তিনি দেশকে সবার উপরে রাখেন। বাইডেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে তার ক্ষমতার বাকি সময় পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পালন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এবার ডেমোক্রেট দল থেকে তিনি নির্বাচন করবেন তা অনেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন জো বাইডেন। প্রাইমারি নির্বাচন শুরুর আগে থেকেই তিনি এ ঘোষণা দেন। প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়ে ডেমোক্রেট দলের সম্ভাব্য নিশ্চিত প্রার্থী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার বয়স ও স্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শীর্ষ স্থানীয় ডেমোক্রেট নেতারা এমন সিদ্ধান্ত থেকে তাকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। এমন দাবির কাছে তিনি মাথা নত না করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম সরাসরি টেলিভিশনে বাজে পারফরমেন্স করেন তিনি। ফলে ডেমোক্রেটদের মধ্যে দেখা দেয় বিভক্তি। তারা রীতি ভেঙে প্রকাশ্যে এসে বাইডেনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। বলেন, যদি বাইডেন নির্বাচন করেনই তাহলে তিনি ট্রাম্পের কাছে ভূমিধস পরাজয় বরণ করবেন। তাকে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে নতুন কাউকে সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। একে একে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রয়োজনীয় তহবিলের দাতারা অর্থ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী জর্জ ক্লুনি। ওদিকে কমপক্ষে ৫ জন সিনেটর বাইডেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে জো বাইডেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। তিনি কোয়ারেনটিনে চলে যান। অবশেষে ২১শে জুলাই তিনি এক্সে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তার এমন সিদ্ধান্তের এক পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি প্রচার করতে থাকে বিবিসি, আল জাজিরা সহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায়, বেশির ভাগ সংবাদ মাধ্যম সেই বিবৃতি হাতে পায়নি।