শেষের পাতা
ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা ফ্রিল্যান্সিং বড় হুমকিতে
মো. আল-আমিন
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
আশরাফুল আলম একজন উদ্যোক্তা। ১০ বছর ধরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে পরিবার চালান। টানা ৪ দিন ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অনলাইনে কাজ করতে পারছেন না তিনি। এতে প্রজেক্টের কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।
আশরাফুল বলেন, আমি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরমে দেশ-বিদেশের কাজ করি। গত কয়েকদিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কোনো কাজ করতে পারিনি। শুক্রবারও একটি কাজ ডেলিভারি দেয়ার ডেডলাইন ছিল। কিন্তু ডেলিভারি দিতে পারিনি। এ ছাড়া হঠাৎ করে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করতে পারিনি। এখন ওই অর্ডার বাতিল করেছে কিনা সেটাও আমি বলতে পারছি না। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে সবকিছু হারিয়ে ফেললাম। একবার আইডি বসে গেলে তা উঠানো কঠিন। নেগেটিভ রিভিউ দিলে আমি অনেক পিছিয়ে যাবো। আগের মতো কাজ পাবো না। তিনি আরও বলেন, আমি একটি প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সিং শিখাই। এখন সেটিও বন্ধ।
বিদেশি গ্রাহক হারানোর শঙ্কার কথা জানিয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেট না থাকায় সবকিছু থমকে গেছে। আমরা বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করতে পারছি না। আমরা বিদেশি গ্রাহক হারানোর শঙ্কায় রয়েছি।
বুলবুল আহমেদ নামের আরেক ফ্রিল্যান্সার বলেন, ইন্টারনেট না থাকায় বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারছি না। আমাদের হাতে যে কাজ রয়েছে, সেগুলো বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
জুনায়েদ ইকবাল একজন শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন। গতকাল একটি কাজ ডেলিভারি দেয়ার কথা থাকলেও ইন্টারনেট না থাকায় তা করতে পারেননি। এতে তার ফ্রিল্যান্সিং আইডি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানান। বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করি। গতকাল ৫০ ডলারের একটি কাজ ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় কাজ ডেলিভারি দিতে পারিনি। গ্রাহককে সমস্যার কথা জানাতেও পারছি না। এতে আমার আইডিতে গ্রাহক নেগেটিভ রিভিউ দিতে পারে। আর নেগেটিভ রিভিউ দিলে আমি কাজের অর্ডার পাবো না।
এদিকে লালসালু শপের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে আমরা সরিষার তেল ও মধু বিক্রি করে থাকি। তবে গত কয়েকদিন ধরে ইন্টারনেট না থাকায় ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আকার ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। বর্তমানে দেশে প্রায় দেড় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে।
বাংলাদেশে এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সেবিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেছেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রতিদিন আইসিটি সেবা খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। বিদেশি গ্রাহকেরা ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছেন। আইসিটি খাতে এর সুদূরপ্রসারী ধাক্কা আসবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানের দৈনন্দিন লেনদেনের ক্ষতির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন না।