প্রথম পাতা
কাঁচা মরিচ সবজির দাম লাগামছাড়া
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবার
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচ আর সবজির দাম লাগামছাড়া। গত শনিবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে গতকাল সামান্য কিছুটা কমে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়েছে। এ ছাড়া অস্বাভাবিক সবজির বাজার। ৬০ টাকার কমে কোনো সবজি মিলছে না। কয়েকটি সবজির দর শতক হাঁকিয়েছে, অন্যগুলো শতকের কাছাকাছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর কোরবানি ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই মরিচের দাম বাড়তে শুরু করে। মাঝখানে দাম কিছুটা কমলেও প্রায় ১৫ দিন ধরে দাম বাড়ছেই।
রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। দু-তিনদিন আগেও ঢাকার বাজারে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে কাঁচা মরিচ। শনিবার বাজারে আমদানি করা ভারতীয় কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৮০-৪০০ টাকায় আর দেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা। অবশ্য পাড়া-মহল্লায় এর চেয়ে বেশি দামেও কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় কাঁচা মরিচ আকারে দেশি মরিচের তুলনায় কিছুটা বড়। তবে রোববার এই পণ্যটির দাম সামান্য কমেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে রাজধানীতে সবজির সরবরাহ কমেছে। উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ভারত থেকে যে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে, তার দামও বেশি। এসব কারণে বাজারে মরিচের দাম ক্রমে বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।
এদিকে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে বেশকিছু সবজির দাম। বাজারে সবজির মধ্যে করলা, বেগুন, বরবটি, গাজর ও টমেটোর দাম শতক অতিক্রম করেছে। মানভেদে করলা ও বরবটির কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বেগুন ১১০ থেকে ১২০, টমেটো ১৩০ থেকে ১৬০ এবং গাজর ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা-ধুন্দলের কেজিতে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। লতি ও কচুরমুখির কেজিও ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এ ছাড়া পটল ও ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও পেঁপের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আকারভেদে প্রতিটি লাউয়ের দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা, জালিকুমড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দর বাড়ার কারণে শাকের দরও ঊর্ধ্বমুখী। লাউ ও পুঁইশাকের আঁটি কিনতে ক্রেতাদের খরচ করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর লালশাক ও কলমিশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। আলুর বাজারে কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। আগের মতোই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। একই পরিস্থিতি পিয়াজের বাজারে। কেজিপ্রতি দাম রাখছেন ব্যবসায়ীরা ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ছিল ঢাকায়। যেসব জেলায় সবজি উৎপাদন হয়, সেসব এলাকায় প্রায় প্রতিদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। এ কারণে ঢাকায় সবজির সরবরাহ কম। দাম পুরোপুরি নির্ভর করে সরবরাহের ওপর। সবজি বেশি এলে দাম কমে যায়, আবার সরবরাহ কম হলে বেড়ে যায়।
পিয়াজ আমদানিকারক ইয়াদুল ইসলাম বলেন, এলসির পিয়াজ কম আসায় দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে। আমদানি পিয়াজে ব্যবসায়ীদের লাভ কম হওয়ায় বিদেশ থেকে কম আসছে।
গুলশানের বাসিন্দা জাহিদ বলেন, খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেশি। এখন সপ্তাহে মুদি দোকানের বাজেট ২-৩ হাজার টাকা রাখলেও যেন যথেষ্ট হয় না।
এদিকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নিয়মিত কাঁচা মরিচ আমদানি হলেও দেশের বাজারে দাম কমছে না। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১১ই জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৮৬টি ট্রাকে করে ৮১৮ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। তবে আমদানি হলেও ভারতীয় মরিচের দামই এখন সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে সবজি ও কাঁচা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক কারণকে দায়ী করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে দেশের ১৮টি জেলায় পানি বেড়েছে। এতে ওই এলাকাগুলো থেকে কাঁচা পণ্যের সরবরাহ কমেছে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু কারও ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি এ পরিস্থিতি সাময়িক। তবে বাজারে আমাদের নজরদারি থাকবে। কারসাজির কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যদিও মাছ, মাংস, ডিম, পিয়াজ, রসুন, আদা, আলু, ভোজ্য তেল, চিনি, আটাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অনেকদিন ধরেই চড়া। প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা, আর আলুর কেজি ৬০-৬৫ টাকা। বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমলেও দেশে সেভাবে কমছে না। গত মাসে ঢাকায় প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ৮০-৯০ টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ১১০-১২০ টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ পণ্যটির দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপের কথা বললেও বাজারে তার প্রভাব তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি থাকছে ১০ শতাংশের কাছাকাছিই।
বেসরকারি চাকরিজীবী বেলায়েত হোসেন বলেন, কাঁচা মরিচ কেনা না হয় আপাতত বাদ দিলাম, ডিমের বিকল্প কী? সবকিছুর দামই তো চড়া! স্বল্প আয়ের মানুষ খুব সংকটে আছে।
পাঠকের মতামত
ঢাকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।অল্প আয়ের মানুষের ঢাকায় থাকা অপ্রয়োজনীয়। ঢাকার বাহিরে বাজার সদাই সহনীয়।ঢাকায় আয় তুলনামূলক বেশী হলেও জীবনযাত্রা ব্যায়বহুল।একারনে এবং অকারণে পরিবারে, পরিবারের বাহিরে ঝুঁট ঝামেলা লেগে যায়, লেগে থাকে। মফস্বল শহরে আয় কম হলেও শান্তিতে বসবাস করা যায়। সুতরাং প্রয়োজন তৈরি করে নয় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঢাকা বা বড় শহরে বসবাস বাদ দিয়ে জেলা বা উপজেলা, গ্রামাঞ্চলে বাস করার মনোযোগ দেওয়া।