শেষের পাতা
বৃষ্টির অজুহাতে লাগামহীন বাজার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবারবর্ষা মৌসুমে সারা দেশে কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবারও সকালে মুষলধারে বৃষ্টি হয় রাজধানী ঢাকায়। এতে সারা রাজধানীতে জলজট হয়। বাসা থেকে অনেকেই বের হতেও পারেনি। বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কম ছিল। ক্রেতাদের আনাগোনাও ছিল কম। নিচু এলাকার বাজারগুলোয় জমেছে পানি। অনেকে বাজারে এসে পড়েন ভোগান্তিতে। এ কারণে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম হু হু করে বাড়ছে বলে জানান বিক্রেতারা। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে বিপাকে পড়েন নিম্নবিত্তরা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। এসব বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ১৪০ টাকা, কাকরোল ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, করলা ১৪০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৭০ টাকা, কচুরমুখি ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইমতিয়াজ আহম্মেদ। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে আবহাওয়া আজ ঠাণ্ডা। তবে বাজার করতে এসে দেখলাম সবজির বাজার অনেক গরম। এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়েনি। বাজারে সব সময়ই জিনিপত্রের দাম বেশি। আবার বৃষ্টির কারণে আজ আরও দাম বেশি।
খিলগাঁও বাজারে শাক বিক্রেতা নয়ন বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে শাকের দাম অনেক বেড়েছে। বাজারে প্রতি আঁটি লাউ শাক ৫০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা, ডাটা শাক ২০ টাকা, লাল শাক ৩০ টাকা, পাট শাক ৩০ টাকা, কচু শাক ২০ টাকা, শাপলা ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, ডাটা ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
খিলগাঁও বাজারের সবজি বিক্রেতা সাইদুর সজিব বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেশি। এর মধ্যে কাওরান বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে সব সবজি কিনতে হয়েছে। কয়েকদিন ধরে পাইকারি বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। এরপর পরিবহন খরচ, রাস্তার খরচ ও দোকান খরচ সবমিলিয়ে আমাদের খরচটা আরও বেশি পড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারে এসে পড়ছে।
বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছেন সোহেল হোসেন। তিনি বলেন, মাছ মাংসের কথা তো বাদই দিলাম। সবজি কিনতেই তো হিমশিম খেতে হচ্ছে। করলা-বরবটির দাম ১৪০ টাকা, গাজর ২০০ টাকা, বেগুন-কাকরোল ১০০ টাকা। এই যদি হয় সবজির দাম, তাহলে কি সাধারণ ক্রেতা সবজি কিনে খেতে পারে?
স্বস্তি ফেরেনি পিয়াজ ও আলুর দামেও। বিভিন্ন বাজারে পিয়াজের কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দামও কমেনি। প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৫০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে বাজারের সব ধরনের মাছের দাম চড়া। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, কাতল প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা ও শিং প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত জুন মাসে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৭২ শতাংশ। এর আগে মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৮৯ শতাংশ। জুন মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০.৪২ শতাংশ। বাস্তবে এর হার আরও অনেক বেশি। সবকিছু মিলিয়ে বেশ বিপদেই আছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। নিম্নবিত্তদের তো আরও বেহাল দশা।
কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই নিম্নআয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। এর মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একাধিক পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এতে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। অনেক সময় পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় তা দিয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে কেনার সময় অনেকে পরিমাণে কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই বাজারে তদারকি জোরদার করে অসাধুদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
আজকে বাজারে ৪ টি সবজি আধা কেজি করে ও দেড়শো গ্রাম কাঁচা মরিচ নিয়েছি ৩২০ টাকা খরচ। এমন অবস্থা এখনি পরে আরো কি হবে..... আল্লাহ জুলুমকারীদের বিচার আবদার করছি।