বাংলারজমিন
শীর্ষ চরমপন্থি সন্ত্রাসী লাল্টু সহযোগীসহ আটক
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবারনিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির খুলনা বিভাগের সামরিক প্রধান ও কুষ্টিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল লতিফ লাল্টু (৬০) ও তার সহযোগী ইদ্রিস মণ্ডল (৪৫) কে যশোরে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ২টি ম্যাগাজিন ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব-৬ যশোরের একটি আভিযানিক দল বুধবার রাতে জানতে পারে, জেলার বেনাপোল পোর্ট থানাধীন সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদকের একটি চালান নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে আসছে তারা। প্রাপ্ত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি তাৎক্ষণিক বেনাপোল সড়কে দলুর গেট (রেলগেট) পাকা রাস্তার উপর চেকপোস্ট স্থাপন করে সন্দেহভাজন বিভিন্ন গাড়ি চেক করে। এ সময় রাত আনুমানিক ১০টায় একটি মোটরসাইকেল চেকিংয়ের জন্য সিগন্যাল দিলে মোটরসাইকেলে থাকা দু’ব্যক্তি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে সময় র্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে লাল্টু ও তার সহযোগীকে আটক করে। আটক লাল্টু কুষ্টিয়ার দুর্বা ডাঙ্গা এলাকার মৃত তেজারত মণ্ডলের ছেলে। তার দেহ তল্লাশি করে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন যার একটির ভেতর ৬ রাউন্ড গুলি ভর্তি ছিল। তার সঙ্গে আটক সহযোগী ইদ্রিস মণ্ডল একই গ্রামের মৃত মঈনুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে। তার হেফাজত থেকে ১টি রিভলবার ও ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত শীর্ষ চরমপন্থি সংগঠন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির খুলনা বিভাগের সামরিক প্রধান হিসেবে ১নং আসামি লাল্টু সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে। কুষ্টিয়ার কাজী আরিফ মার্ডার, যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল মার্ডার, যশোরের টাউন হলে উদীচী বোমা হামলা ট্রাজেডির পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে পুলিশ কম্বিং অপারেশন শুরু করে। এই অপারেশনে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থিদের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে। সে সময় জীবন বাঁচাতে চরমপন্থি লিডার লাল্টু অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ঘোষণা দেয়। সূত্র বলছে, ২০০১ সালে লাল্টু নিষিদ্ধ ঘোষিত শীর্ষ চরমপন্থি সংগঠন ‘শ্রমজীবী গণমুক্তিফৌজ’ প্রতিষ্ঠা করে এবং তার বিশ্বস্ত কয়েকজন সহযোগীর হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে। পরবর্তীতে তার নিজের এলাকায় একটি ২০/৩০ জনের গ্রুপ তৈরি করে জেলার মধ্যে খুন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও কন্ট্রাক্ট কিলিং মিশন শুরু করে। সন্ত্রাসী লাল্টু এলাকাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবেই সর্বজন পরিচিত। সে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের স্বর্গরাজ্য তৈরি করে বলেও জানা যায়। বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে ২০২২ সালের ৩১শে অক্টোবর পুলিশের হাতে আটক হয়ে দীর্ঘদিন কারা ভোগ করে জামিনে মুক্তি পেয়ে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ লাল্টুর নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রারী কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানাধীন দুর্বাচারা এলাকায় অর্ধশতাধিক গুলিবর্ষণসহ বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট করে। বিষয়টি অত্র এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছিল। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলাসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তার এই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে সদর উপজেলার দুর্বাচারা এলাকার সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সময় মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন মর্মে জানা যায়। আর ইদ্রিস তার গুরু আব্দুল লতিফ লাল্টুর সকল অপরাধের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করে। আরও জানা যায়, লাল্টু যশোর জেলার বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আমদানিকৃত অস্ত্র-গোলাবারুদ স্বল্প দামে ক্রয় করে অধিক দামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবারহ/বিক্রিসহ বিভিন্ন কিলিং মিশনে অস্ত্র গোলাবারুদ ভাড়া প্রদান করে থাকে। এ ছাড়াও তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কাজে এই অস্ত্র-গোলাবারুদ ব্যবহার করে থাকে।