দেশ বিদেশ
টেলিগ্রাফের রিপোর্ট
‘পশ্চিমবঙ্গকে জড়িত না করে’ গঙ্গা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় ক্ষোভ মমতার
মানবজমিন ডেস্ক
১০ জুলাই ২০২৪, বুধবারভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা নিয়ে আলোচনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এর ভেতর জড়িত না করে এটা করেছেন, যা দুর্ভাগ্যজনক। গত সোমবার নবান্ন সচিবালয়ে প্রশাসনিক মিটিংয়ে বক্তব্য রাখেন মমতা। এ সময় তিনি ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষর করা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, এতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ফারাক্কায় ড্রেজিং করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, যেখান থেকে বাংলাদেশকে পানি দেয়া হয়। এটা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যাতে আমরা পানির সংকটের মুখোমুখি না হই। কিন্তু এখন পর্যন্ত গঙ্গায় সেই ড্রেজিং করা হয়নি। উপরন্তু সে সময় নদী ভাঙনরোধে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে পুনর্বাসনের জন্য ৭০০ কোটি রুপির একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে বহু বাড়িঘর হারিয়ে গেছে। এত এত মানুষ দুুর্ভোগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি পয়সাও দেয়া হয়নি। ভারতের ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক অভিজিৎ সিনহা। এতে তিনি বলেন, গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২০২৬ সালে। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত সফর করেন, তখন সিদ্ধান্ত হয়েছে- চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। এদিন প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রীয় সরকার বলছে যে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করবে। বর্ষার সময় তিস্তা উপচে পড়ে। কিন্তু অন্য সময়ে এতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। সিকিমে এ নদীতে ১৪টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থাকার কারণে উজানে পানি ধরে রাখা হয়। যখন এসব প্রকল্প নেয়া হলো তখন কেন্দ্রীয় সরকার কেন পদক্ষেপ নিলো না? জানতে চান মমতা। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন করলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে পানি সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এমনকি উত্তরবঙ্গের জনগণ পানের পানিও পাবে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন চারদিনের সফরে চীনে গেছেন, সেদিনই মমতা এ মন্তব্য করলেন। শেখ হাসিনার এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তিস্তার পানি ব্যবহার করে সেচকাজ উন্নত করতে এবং শাখা নদীগুলোতে পানি ধরে রাখার জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ওই বৈঠকে পাহাড়ি মহাসড়কগুলোর ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। বিশেষ করে এনএইচ১০ মহাসড়ক। এটি ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সিকিম এবং কালিমপংকে যুক্ত করেছে। এনএইচ১০-এর একটি অংশ গত আটদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কারণ অনেক স্থানে ভূমিধস এবং গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা। কারণ, তারাই এটা পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে। ফলে এটা মেরামত ও সংস্কার করা উচিত তাদেরই। তিনি আরও বলেন, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কগুলো অবিলম্বে মেরামত করা উচিত। একই বৈঠকে মমতা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
চীনের সহায়তায় আত্রাই নদীতে বাংলাদেশ যে বাঁধ নির্মাণ করেছে সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করায় মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নাখোশ কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, চীনের সহায়তায় ওই বাঁধ নির্মাণের কারণে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকার মানুষ পানীয় জলের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এ ইস্যুটি বার বার প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা সেচ বিভাগকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্পর্শে থাকার আহ্বান জানান। নিশ্চিত করতে বলেন যে, দামোদর ভ্যালি করপোরেশন (ডিভিসি) রিজার্ভার যেন ড্রেজিং করে দিল্লি। এটা করা হলে অনেক পানি ধরে রাখা যাবে এবং পশ্চিমবঙ্গকে প্রতি বছর বন্যা থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। যদি তারা (ডিভিসি) ড্রেসিং করে, তাহলে দুই লাখ কিউসেক পানি ধরে রাখা যাবে। কিন্তু তারা তা করে না। গত ৫-৬ বছর ধরে এ কথা শুনে আসছি আমি। তাই সেচ বিভাগের উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদেরকে বলা যে, তাদের ড্রেজিং করা উচিত। এটা করা হলে প্রতিবছর বন্যার হাত থেকে রক্ষা পায় পশ্চিমবঙ্গ।