অনলাইন
এসডোর গবেষণা
দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য ও কৃষি
স্টাফ রিপোর্টার
(২ দিন আগে) ২ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:২৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন
![mzamin](uploads/news/main/116758_pic-ESDO2.webp)
তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশের তাপমাত্রা গত ৫০ বছরে বেড়েছে। এর প্রধান কারণ ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর উপর সমুদ্রের প্রভাব। দেশের ইতিহাসে গত ৫২ বছরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি স্বাস্থ্য, কৃষি, পানিসম্পদ এবং পরিবেশের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে হলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়াও এর ফলে মানুষ ডিহাইড্রেশন, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই তথ্যটি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর উইমেন'স ভলান্টারি এসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) অডিটোরিয়ামে এ সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন এসডোর গবেষকরা। এর ফলাফলগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবগুলোকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
![](https://mzamin.com/uploads/news/extra/1719919718SDO.jpg)
পূর্বাভাস অনুযায়ী, যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। অনুমান অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে তা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে যে চারটি প্রধান কারণ দায়ী: ১. বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান; ২. জলবায়ুর পরিবর্তন: ৩. জীবাশ্ম জ্বালানি এবং শিল্পকারখানা থেকে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধি, যা গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৪. এল নিনো ইভেন্টের মতো মহাসাগরীয় প্রভাব। এই কারণগুলি সম্মিলিতভাবে সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহকে আরো তীব্র করে তুলেছে।
মানুষের পরিবেশ বিরোধী কার্যকলাপের কারণে দ্রুত গতিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রতিদিন তাপ প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে পৃথিবী দ্রুত শীতল থেকে উষ্ণতর সময়ে রূপান্তরিত হচ্ছে।
গবেষণাটি বাংলাদেশে একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা তুলে ধরেছে। ২০০০ সালের শুরু থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা অতিক্রম করেছে। পূর্ববর্তী তথ্যানুসারে, ১৯৯৪, ২০০৪ এবং ২০২৪ সালে চরম তাপপ্রবাহ বাংলাদেশে আঘাত হানে। এই প্যাটার্নটি থেকে বোঝা যায় যে, এই ধরনের তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা প্রায় প্রতি দশকে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এই প্রবণতা অনুসরণ করে, অনুমান করা যায় যে, ২০৩৪ সালের দিকে আরেকটি চরম তাপপ্রবাহ ঘটতে পারে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তন আগে থেকে অনুমান করা যায় না, তবে অনুমানটি আমাদের প্রস্তুতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা প্রদান করে।
গবেষণায় ১৯৭২ সাল থেকে তাপপ্রবাহের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে, যা সেই সময় প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। বর্তমানে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের তা ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ দাঁড়িয়েছে, যার কারণে এই বছর ১৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ২০২৩ সালে তাপপ্রবাহের কারণে প্রতিদিন ১২০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে এই তাপপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং বয়স্কদের মধ্যে তাপজনিত কারণে ২০৮০ সালের মধ্যে প্রতি ১০০,০০০ জনে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় উচ্চ তাপপ্রবাহের কারণে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন কিন্তু এই সমস্যা মোকাবিলার বিষয়ে তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে কৃষিখাতে ক্ষতিসাধন করছে, যেমন ২০২১ সালের তাপপ্রবাহে ২১০০০ হেক্টরের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে। মে-এপ্রিল মাসে ৫০ থেকে ৬০ জন মানুষের উপরে কেইস স্টাডি করে তাপমাত্রার প্রভাব বুঝার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন গরমের কারণে হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী বেড়েছে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ২০ শতাংশ কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
এসডোর চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব, সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, এসডো পূর্ববর্তী তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই গবেষণাটি করেছে এবং যদি তাপপ্রবাহের এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে তবে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আমাদের জন্য অসহনীয় হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহ প্রবণতা কমানো সম্ভব এবং এই লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে চরম তাপপ্রবাহ চলছে, যার তাপমাত্রা ইতিমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব নগর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ স্বাস্থ্য, কৃষি এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে এবং আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্য বর্তমান উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।