ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

ইসরাইলি হামলায় লন্ডভন্ড গাজার কৃষিজমি

মানবজমিন ডেস্ক

(২ দিন আগে) ২ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০১ পূর্বাহ্ন

mzamin

গ্রীষ্মের শুরুতে গাজা উপত্যকার ক্ষেতগুলোতে সাধারণত ফসল ঘরে তোলার উপযুক্ত হয়ে পাকতে শুরু করে। এসময় উপত্যকাটির কৃষকদের মুখে থাকে হাসি। তারা তাদের ফসল তুলতে শুরু করেন। তবে গত নয় মাসে ইসরাইল উপত্যকাটির প্রায় সকল আবাদি জমি ধ্বংস করে ফেলেছে। এতে গাজাবাসী দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে গাজার জনসংখ্যার অন্তত ৯৬ শতাংশ অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করছেন। এছাড়া প্রতি পাঁচ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে কমপক্ষে একজন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এই হিসেব মতে গাজার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারে ভুগছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে গাজা ভূখণ্ডের মোট জনসংখ্যার ৪ লাখ ৯৫ হাজার মানুষ অনাহারে তাদের সময় পার করছেন। 

বিভিন্ন স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন স্থিরচিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে গাজার কৃষিজমির অর্ধেকেরও বেশি গত নয় মাসে ইসরাইলের হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন
গণমাধ্যমটির হিসেব মতে উপত্যকাটির ৬০ শতাংশের বেশি আবাদি জমি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের জোগান এমনিতেই কম থাকে। সেক্ষেত্রে ওই অঞ্চলের মানুষের ক্ষুধা নিবারনে খাদ্যের জোগান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গাজার অর্ধেকের বেশি কৃষিজমি ধ্বংস করেছে ইসরাইল। এতে তীব্র খাদ্য সংকটের ঝুঁকিতে পড়েছে গাজাবাসী।

আল জাজিরা বলছে, গত নয় মাসে ইসরাইল গাজার ৩৭ হাজার ৯০০ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। যাদের বেশির ভাগ নারী এবং শিশু। এছাড়া গাজার বোমার আঘাতে বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন আরও ৮৭ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি বাহিনী সেখানের হাসপাতালগুলোকেও তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, যাতে সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল আবিবের ক্রমাগত অবরোধের ফলে গাজায় প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্যের জোগানও নেই। নেতানিয়াহুর বাহিনী সেখানে সৃষ্টি করেছে ভয়াবহ রকমরে দুর্ভিক্ষ যাতে লাখ লাখ নারী ও শিশুরা সেখানে খাদ্য সংকটে তাদের দিন গুজরান করছে। তাদের হামলা গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ কোনো স্থানই আর নিরাপদ রাখেনি।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া নামক এলাকাটি পুষ্ট এবং রসালো স্ট্রবেরি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয়ভাবে এই স্ট্রবেরিকে ‘রেড গোল্ড’ বলা হয়। তবে ইসরাইলি বুলডুজার এবং ভারী যন্ত্রপাতি সেই ক্ষেতগুলোকে ধ্বংস করেছে। গত অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধের আগ পর্যন্ত গাজার স্ট্রবেরি শিল্পে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান ছিল। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে স্ট্রবেরির বীজ বপন এবং রোপণ শুরু হতো এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ক্ষেত থেকে তা তোলা হতো। তবে ইসরাইলের তাণ্ডব শুরু হওয়ার পর সেখানে স্ট্রবেরি উৎপাদন পুরোপুরিভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যারফলে কর্মসংস্থান হারিয়েছে স্থানীয় কয়েক হাজার কৃষক এবং খাদ্যের সংকটও আরও প্রকট হয়েছে।

ইসরাইলের চলমান হামলায় ওই অঞ্চলের ইউসেফ আবু রাবিহ নামের এক কৃষকের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি তার বাড়ির সামনে স্ট্রবেরির ক্ষেত করেছিলেন তবে ইসরাইলের হামলায় তার উৎপাদন প্রচেষ্ট পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। 

এছাড়া গাজার শহরগুলোতেও ইসরাইলি হামলার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। এসব অঞ্চলে গাজার মোট জনসংখ্যার ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। শহরাঞ্চলগুলোতেও ক্ষুদ্র পরিসরে স্ট্রবেরির চাষ করতেন তারা। তবে ইসরাইলি হামলায় সেখানের এসব ক্ষুদ্র প্রয়াসও ধ্বংস হয়ে গেছে।

অন্যদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর অলিভ বা জলপাই চাষ হত। তবে গাজায় ইসরাইলের হামলার আগের এবং পরের স্যাটেলাইট থেকে সংগৃহীত ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেসব অঞ্চল আগে সবুজ ছিল সেগুলো হামলার পর ওপর থেকে ধূসর দেখা যাচ্ছে অর্থাৎ হামলার ফলে ওই অঞ্চলের ফসলের গাছগুলো সব ধ্বংস হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনে অলিভ বা জলপাই চাষ খুবই জনপ্রিয়।
গত বছরের ২২ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতির সময় ফিলিস্তিনি কৃষকরা তাদের জলপাই সংগ্রহ করতে যায় কারণ তাদের বেঁচে থাকার জন্য এই ফসলের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এগুলো থেকে তারা তেল এবং সাবান তৈরি করে তা বাজারজাত করে জীবন ধারণ করে।

এভাবে গাজার যেসকল ফসলের ওপর নির্ভর করত সেখানের জনগণ তার উৎপাদন পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ইসরাইলের চলমান হামলা যদি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে সেখানের মানুষ কর্মসংস্থান হারানোর পাশাপাশি চরম দুর্ভিক্ষে পতিত হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

১০

প্রেমের টানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেনীতে/ পঞ্চাশোর্ধ নারী ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করলেন ২৫ বছরের যুবককে

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status