ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

দুর্ধর্ষ এক আন্ডারওয়ার্ল্ড লেডিকে নিয়ে রহস্য

মানবজমিন ডেস্ক
৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

ড. রুজা ইগনাতোভা। বুলগেরিয়ান আন্ডারওয়ার্ল্ড লেডি। এফবিআই’র মোস্ট ওয়ান্টেড নারী তিনি। ভুয়া ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ৪৫০ কোটি ডলার নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। ওয়ানকয়েন নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণা করে বিশ্ব জুড়ে বিখ্যাত হন। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ বুলগেরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এই জার্মান বিনিয়োগকারীকে বিশ্বাস করে তার কাছে তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় জমা রেখেছিলেন। অনলাইনে নতুন এই মুদ্রার ওপর তারা তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও আস্থা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে ড. রুজা ইগনাতোভা বুলগেরিয়ার সোফিয়াগামী একটি বিমানে উঠে বসেন। তারপর তিনি লাপাত্তা হয়ে যান। তারপর তাকে আর কখনো দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন
তার কি হয়েছে সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত জানে না। প্রতারণার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন এফবিআই’র মোস্ট ওয়ান্টেড ওম্যান। অভিযোগে বলা হয়, ১৭৫টি দেশের মানুষের বিনিয়োগ কমপক্ষে ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে তিনি পালিয়েছেন। ড. রুজা ইগনাতোভার কী হয়েছে সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছে বিবিসি। এক বছরের বেশি সময় ধরে তারা এই কাজ করেছে। তাতে দেখা গেছে বুলগেরিয়ার সন্দেহজনক ক্রাইম বস- হৃস্টোফোরোস নিকোস আমানাতিদিস, যিনি ‘তাকি’ নামে খুব বেশি পরিচিত, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে ড. রুজা ইগনাতোভার। এফবিআই’র পাশাপাশি ইউএস ইন্টারনাল রেভিন্যু সার্ভিসের জন্য ওয়ানকয়েন ইস্যুতে তদন্ত শুরু করেন রিচার্ড রেইনহার্ডট। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, আমাদেরকে বলা হয়েছে, তার (ড. রুজা ইগনাতোভা) শারীরিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন অভিযুক্ত বিশাল পরিমাণের মাদক ব্যক্তিত্ব। রিচার্ড রেইনহার্ডট বর্তমানে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তাকি একাধিকবার আসা-যাওয়া করেছেন। এটা একবারের বিষয় নয়। বার বার এটা ঘটেছে। তিনি (ড. রুজা ইগনাতোভা) তাকি, নিজের দেহরক্ষীসহ বুলগেরিয়াগামী একটি বিমানে আরোহণ করেন। তারপর উড়ে যান এথেন্সে। সেখান থেকে তার দেহরক্ষী ফিরেছেন। কিন্তু ড. রুজা ইগনাতোভা ফেরেননি। 

একজন সহকারী অ্যাটর্নি বলেছেন, আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে যে খুবই উল্লেখ করার মতো সব সময়ের একজন মাদক পাচারকারী বুলগেরিয়ায় আছেন, যিনি ওয়ানকয়েনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। তিনি রুজা ইগনাতোভার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এল চ্যাপো বা পাবলো এস্কোবারের মতোই তাকি একটি বিরাট নাম বুলগেরিয়ায়। বুলগেরিয়ায় সুসংগঠিত অপরাধ নেটওয়ার্ক ও বড়মাপের মাদক পাচারকারী চক্রের প্রধান হিসেবে তাকে ব্যাপকভাবে সন্দেহ করা হয়। বিবিসি যেসব ডকুমেন্ট পেয়েছে সে অনুযায়ী পুলিশ তাকিকে সন্দেহ করে যে তিনি মাদক পাচার করতে ওয়ানকয়েন আর্থিক নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করেছেন। বুলগেরিয়ার সাবেক উপমন্ত্রী ইভান হৃস্টানভ বলেন, তাকি একটা ভূত। তাকে আপনি কখনো দেখতে পাবেন না। তার কথা শুধু শুনতে পাবেন। অন্যদের মাধ্যমে তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলেন। যদি সেই কথা আপনি না শোনেন, তাহলে দুনিয়া থেকে আপনাকে অদৃশ্য করে দেবে। বিদেশি এজেন্সিসহ এসব তদন্ত থেকে রুজা ইগনাতোভাকে সুরক্ষা দিতে পারেন একজনই। তিনি হলেন তাকি। 

তাকি এখন দুবাইয়ে বসবাস করছেন বলে খবরে বলা হচ্ছে। বুলগেরিয়ার  লোকজন বলছেন, নিরাপত্তার জন্য মাসে তাকে এক লাখ ইউরো দিচ্ছেন মিস ইগনাতোভা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব সুরক্ষাকারীরাই হয়ে থাকতে পারে আগ্রাসী। ২০২২ সালের একটি রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে বুলগেরিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক দিমিতার স্টোয়ানোভ বিবিসিকে বলেছেন, মিস ইগনাতোভা অদৃশ্য হওয়ার এক বছর পর তাকে হত্যা করা হয়েছে।  এক্ষেত্রে তিনি পুলিশের একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। তাতে তাকির এক আত্মীয়কে মদ্যপ অবস্থায় বলতে শোনা যায়, ২০১৮ সালের শেষের দিকে তাকির নির্দেশে মিস ইগনাতোভাকে হত্যা করা হয়েছে। তার দেহকে টুকরো টুকরো করে একটি প্রমোদতরীতে করে আয়োনিয়ান সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়েছে। 

তাকির সঙ্গে যুক্ত অনেক অপরাধী দাবি করেছে তাকির জন্য নির্ভরতা হয়ে ওঠেন মিস ইগনাতোভা। সম্পদের রেকর্ডে দেখানো হয়েছে, মিস ইগনাতোভা নিখোঁজ হওয়ার পর তার অনেক সম্পদ এখন ব্যবহার করছেন এমন সব ব্যক্তি, তাকির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক ছিল। মিস ইগনাতোভাকে হত্যার অভিযোগে তাকিকে কখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। তার দেহও কোনোদিন পাওয়া যায়নি। তদন্তকারীরা বলেছেন, তাকির বিচার করার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই। তা সত্ত্বেও এখনো গুজব আছে যে, তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে আসল সত্য থেকে সবাইকে দূরে সরিয়ে রাখার  কৌশল হিসেবে।

পাঠকের মতামত

মিস ইগনাতোভা , আনার এক রাস্তার বাসিন্দা সমান পরিনতি ....

Salith Khan
৪ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:০১ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

প্রেমের টানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেনীতে/ পঞ্চাশোর্ধ নারী ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করলেন ২৫ বছরের যুবককে

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status