বাংলারজমিন
কুড়িগ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় ৪ শতাধিক কামার
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে
১৬ জুন ২০২৪, রবিবার
কুড়িগ্রাম জেলার প্রায় ৪ শতাধিক কামার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন। কুড়িগ্রামে ঈদকে ঘিরে বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। ক্রেতারা খুঁজছেন শান দেয়া ঝকঝকে দা ও ছুরি। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্মকাররা ক্ষতিকর যন্ত্রপাতির অপব্যবহার করতে দেন না বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুশফিকুল আলম হালিম জানান, যেহেতু ইক্যুইপমেন্টগুলো ধারালো, সেগুলো যেন খারাপ মানুষের হাতে না পড়ে। এজন্য মোটিভেশনাল কথাবার্তার পাশাপাশি আমাদের নজরদারিও থাকে কামারদের কার্যক্রমের প্রতি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো খারাপ রিপোর্ট আসেনি। তারপরও আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকি যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারকৃত জিনিসগুলো যেন খারাপ কাজে ব্যবহার করা না হয়। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, অর্থনৈতিক সংকট, র- মেটেরিয়ালস’র উচ্চমূল্য এবং সামাজিকভাবে মর্যাদা না পাওয়ায় অনেকে পেশা পরিবর্তন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই পেশার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পাশে দাঁড়ানো। কুড়িগ্রাম সদরে প্রায় ৮০জন কামার রয়েছে। পুরো জেলা জুড়ে কামার রয়েছে প্রায় ৪ শতাধিক। একসময় কৃষিকাজ, বাড়িঘর মেরামত ও গৃহস্থালি কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল কামারদের। ব্যবসাটা তখন ছিল জমজমাট। হাল আমলে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সেই পেশা এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও গ্রামে গ্রামে ছিল কামারদের অবস্থান। এখন কাচামালের মূল্য তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের কারণে শতশত মানুষ পেশা পরিবর্তন করেছে। তবে কামারদের দক্ষ হাতের কাজের এখনো জনপ্রিয়তা রয়েছে। ফলে কোরবানি এলেই আবার লোকজন ছুটে আসেন কামারদের কাছেই। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজারের সবচেয়ে পুরাতন কর্মকার মোজাম্মেল হক জানান, প্রায় ৩৬বছর ধরে এই পেশায় আছি। পেশাটার প্রতি মায়া পড়ে গেছে। ছাড়তে পারি না। এখন ১২ থেকে ১৩ টাকার কয়লা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে। ৩০ টাকা কেজির লোহা কিনতে হচ্ছে একশ টাকার উপরে। সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের দাম তেমনটা বাড়েনি। পার্শ্ববর্তী ছিনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা ভবেন ও খগেন দুই ভাই প্রায় ৩৪ বছর ধরে কাজ করছেন। পাশেই কাজ করছেন তাদের গ্রামের কৃষ্ণমোহন। তারা জানান, একসময় ছিনাইতে ২৫ জন লোক কামারের পেশায় নিয়োজিত ছিল। এখন ৮ থেকে ১০জন এই পেশায় আছে। বাকিরা অন্য পেশায় চলে গেছেন। এসব যন্ত্রপাতি তৈরি করতে প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেয়া লাগে কিনা, এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, এসব যন্ত্রাদি তৈরি করতে তাদেরকে কারও কাছ থেকে কোনো অনুমতি নিতে হয় না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হয় এমন যন্ত্রপাতিও তারা কখনো তৈরি করেন না।