ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৬ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

শেষটা কি দেখেই ফেললেন সাকিব

সৌরভ কুমার দাস
১২ জুন ২০২৪, বুধবার
mzamin

জয়ের জন্য বাংলাদেশের তখন প্রয়োজন ৮ বলে ১৪ রান। উইকেট ও কন্ডিশন মিলিয়ে যেটা যথেষ্ট কঠিন। ওই মুহূর্তে ব্রডকাস্টিং ক্যামেরায় দেখা গেল ডাগআউটে বসে হাসছেন সাকিব আল হাসান। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ  সদস্য, যিনি কিনা কিছুক্ষণ আগেই উইকেট ছুড়ে দলকে বিপদে ফেলেছেন। দলের এমন ক্রাইসিস মোমেন্টে সাকিবের হাসিতে বিস্মিত সবাই! ঠিক এমন দৃশ্যের মতোই ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স। তবে কি সাকিব ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেলেছেন, প্রশ্নটা এখন উঠতেই পারে।

সোমবার সাকিব ব্যাটিংয়ে নামেন ৪ নম্বরে। ১১৩ রান তাড়া করতে নেমে ২৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ। অধিনায়ক শান্তকে তখন উইকেটে থেকে সঙ্গ দেয়ার কথা তার। অথচ তিনি কী করলেন, প্রোটিয়া পেসার নর্কিয়ার করা অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট ডেলিভারিকে পুল করতে গেলেন! জোর করে শট খেলতে গিয়ে তুলে দিলেন আকাশে! ফলাফল ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। তার শট খেলা দেখে মনে হচ্ছিল তিনি মাঠের চেয়ে ডাগআউটে বসে থাকতেই বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করছেন! এমর শটের পর দলের প্রতি তার দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায় অবশ্য। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই গুরুত্বপর্ণ সময়ে উইকেট ছুড়ে দিতে ওস্তাদ সাকিব। বারবারই বলে এসেছেন, ‘আমি এভাবেই খেলি।’ ৩৭ বছর বয়সে এসে সবকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েও কি একই কথা বলবেন তিনি! সাকিব আল হাসান আর বিতর্ক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিত্যদিনের সঙ্গী। কখনো দর্শক পেটাচ্ছেন তো কখনো ক্যামেরায় বাজে অঙ্গভঙ্গি করছেন। আবার সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে মাঠেই আম্পায়ারকে অপদস্ত করছেন। বেটিং সাইটের সঙ্গে চুক্তি করা, ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে সেটা না জানানোয় খোদ আইসিসিই তাকে নিষিদ্ধ করেছিল। যদিও এতদিন দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার মাঠের পারফর্মেন্স দিয়েই এই বিতর্কগুলোকে ঢেকেছেন। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে তো মাঠেও তিনি বিবর্ণ। এতটাই বিবর্ণ যে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সোমবার তাকে ১ ওভার বোলিং করিয়ে পরে তা বোলিংয়ে আনার সাহস পাননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আন্তর্জাতিক টি- টোয়েন্টতে পুরো ম্যাচ হয়েছে এমন কোনো ম্যাচে এই প্রথম মাত্র ১ ওভার বোলিং করলেন তিনি। 

অবশ্য সাকিবের খামখেয়ালিপনার তো আর শেষ নাই! গত বিপিএলের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি- টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম নিলেন। হুট করে টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচে খেলতে চাইলেন এবং খেললেনও। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ৩ ম্যাচে খেললেন না! কারণ হিসেবে দেখা গেল, তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে কয়েকটি ম্যাচ খেলতে চান। এরপর শেষ দুই ম্যাচে খেলতে চান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অথচ এই লীগেই কোনো এক ম্যাচের দিন সকাল বেলা শেখ জামালের কোচ সোহেল ইসলাম জানতে পারেন সাকিব ম্যাচ খেলছেন না। যদিও তার আগের দিন রাতেও সাকিবকে নিয়েই পরিকল্পনা সাজান তিনি।  হ্যাঁ, সাকিব দেশের সেরা ক্রিকেটার। তার ধারে কাছেও কেউ নেই! সাকিবের পরিসংখ্যানও বলছে সে কথা। এখনো আইসিসি অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে সাকিব নাম্বার ওয়ান। কিন্তু তাই বলে জাতীয় দলের মতো জায়গায় যখন ইচ্ছা খেলবেন যখন ইচ্ছা খেলবেন না এই স্বেচ্ছাচারিতা পৃথিবীর অন্য কোথাও চলে কিনা জানা নেই! এরপরও এগুলো মেনে নেয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে পারফর্মেন্স। সেটাও আর সঙ্গ দিচ্ছে না সাকিবকে।

যুক্তরাষ্ট্র সিরিজে ৩ ম্যাচ পেয়েছেন মাত্র ১ উইকেট। আর দ্বিতীয় ম্যাচে তো দলের বিপদের সময়েই উইকেট ছুড়ে দেন। সবমিলিয়ে শেষ ৫ টি- টোয়েন্টিতে উইকেট মাত্র ১টি। ৬০৭ দিন আর ২০ ম্যাচ আগে এই সংস্করণে সর্বশেষ করেছেন ফিফটি। এ সময়ে ১৯ ইনিংসে টি-টোয়েন্টির এই এক নম্বর অলরাউন্ডার রান করেছেন মাত্র ২৫২, সর্বোচ্চ ৩৮। গড় ১৮ আর স্ট্রাইক রেট ১১৩। 
এর আগে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে খুবই বাজে খেলেছেন। ৮ ম্যাচে করেছেন ১টি ফিফটি। পরে জানা গেল চোখের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। অথচ ঠিকই খেলে গেছেন। এরপর বিপিএলে দেখা গেল চোখের কারণে হেড পজিশনই পাল্টে গেছে। শুরুর দিকে রান খরায় ভোগা সাকিব শেষদিকে কয়েকটি ইনিংস খেললেন। এরপর বলা হলো সাকিব তো শুধু স্পিনার হিসেবেই খেলতে পারেন। তাকে দেখেই বোঝা যায় ব্যাটিংয়ের জন্য মোটেও ফিট নন তিনি। চোখের সমস্যাটা ভোগাচ্ছে তাকে। তবে তিনি তো আবার স্বীকারই করতে চান না। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিককে পাল্টা বলে বসেন তার চেয়ে ভালো  কে দেখেন, চোখের কোনো সমস্যা নেই। অথচ ব্যাটিংয়ের তার এই হেড পজিশনের পরিবর্তন সেটা তো চোখের সমস্যার জন্যই হয়েছে। এটা স্বীকার করলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে কিনা কে জানে! এই সাকিবই তো কয়েক মাস আগে এক সিনিয়র ক্রিকেটারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন আনফিট অবস্থায় খেললে দেশের সঙ্গে বেইমানি করা হয়! সেটা নিজের বেলায় বুঝতে পারছেন না কেন! তাহলে কেন সাকিব উপরের দিকে ব্যাটিং করছেন এই প্রশ্নও কিন্তু তোলা যায়। এর মাঝে আবার সাকিব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। বাণিজ্যিক কাজও করছেন ঠিকঠাক। এরপর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও একই দৃশ্য। বোলিংয়ে বেদম মার খেলেন, ব্যাটিংয়ে উইকেট ছুড়ে দিলেন এমন সময় যখন দলে তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এগুলো থেকে দলের প্রতি তার নিবেদন নিয়েই কিন্তু প্রশ্ন তৈরি হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা হয়েছে নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। খেলা চলাকালীন ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন সাকিবই আজ বাংলাদেশের দুর্বল পয়েন্ট! 

ঠিকই তো যে ক্রিকেটারকে ১ ওভারের বেশি বল করানো গেল না কন্ডিশনের কারণে, সেই তিনি উইকেট ছুড়ে দিলেন তিনি দুর্বল পয়েন্টই। তবে কি কন্ডিশনের কারণে হলেও সাকিবকে এই ম্যাচে বিশ্রাম দেয়া যেতো না? টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য এই সাহস দেখাতে কখনো পারবে কিনা সেই সন্দেহ থেকেই যায়। কিন্তু এত এত অর্জনের ক্যারিয়ারের শেষদিকে দলের দুর্বল দিক হয়ে কি খেলা চালিয়ে যাবেন সাকিব আল হাসান! গতকাল জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বললেন সাকিব ৪ ওভার বোলিং করতে না পারলে সেটা আসলেই সমস্যা। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দর শেওয়াগ আর এক ধাপ এগিয়ে বললেন সাকিবের লজ্জা হওয়া উচিত। দেশের সেরা ক্রিকেটার নিশ্চয়ই শেষটা এমনভাবে করতে চাইবেন না। 

কয়েক বছর আগের কথা, একটা সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন যেদিন বুঝবেন তিনি বাসের ড্রাইভার নন প্যাসেঞ্জার সেদিন তিনি ক্রিকেট ছেড়ে দেবেন। সেইদিন বোধহয় চলেই এসেছে সাকিব, সেটা আপনি পরের ম্যাচে ম্যাচসেরা হলেও। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার মোক্ষম সময় চলে এসেছে। দেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার বিদায় নিক রাজসিক ভঙ্গিতেই, দলের বোঝা হয়ে নয়।

পাঠকের মতামত

খেলার পারফর্মেন্স যতটা মনে না রাখার মতো, তার চেয়ে তার চরম দুর্ব্যবহার ও একগুয়েমি বেশী মনে রাখার মতো। সাকিব এখন যুদ্ধের মাঠের আহত ঘোড়া। যা শুধু অন্য যোদ্ধাদের বোঝা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সাইদ জামান
১২ জুন ২০২৪, বুধবার, ৪:৪৭ অপরাহ্ন

সাকিবের ক্রিকেটে আর কিছু দেয়ার নেই। এখন রাজনীতির খেলায় নিজেকে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা উচিত।

Andalib
১২ জুন ২০২৪, বুধবার, ৩:৪৭ অপরাহ্ন

দলের বিপদে দায়িত্ব-জ্ঞানহীন শট খেলে আউট হওয়ার পর ডাগআউটে বসে যিনি হাঁসতে পারেন, তিনি কখনো জন-প্রতিনিধি এবং সত্যিকার দেশ-প্রেমিক হতে পারেননা। শুধু টাকা কামিয়ে কি ভাবে রাতারাতি বিল গেটস হওয়া যায় তার চিন্তা-চেতনায় তা এখন উদীয়মান বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

shihab
১২ জুন ২০২৪, বুধবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

সাকিবের চলে যাওয়াটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

Khaja
১২ জুন ২০২৪, বুধবার, ৫:১০ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status