বাংলারজমিন
কোম্পানীগঞ্জে সিন্ডিকেট করে গুদামে ধান বিক্রি: তদন্ত কমিটি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৮ মে ২০২৪, মঙ্গলবারকোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর বোরো মৌসুমে কৃষকদের পরিবর্তে একটি চক্র সরকারি গুদামের ধান বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী ও সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড জোগাড় করেছেন এবং কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিমণ ধান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে কিনে সরকারি খাদ্যগুদামে ১২৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ই মে উপজেলা খাদ্যগুদাম প্রাঙ্গনে চলতি বছরের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। এ বছর কোম্পানীগঞ্জে ৩২ টাকা কেজি দরে ৭৫২ মেট্রিক টন ধান এবং ৪৫ টাকা কেজি দরে ৯৫ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ ধানের দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সরকারিভাবে প্রতিমণ ধান কেনা হচ্ছে ১২৮০ টাকায়। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, বাজারের চেয়ে মুনাফা বেশি পাওয়ায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে নিচ্ছেন। তারা কিছু কৃষককে ‘ম্যানেজ’ করে তাদের কৃষি কার্ড ব্যবহার করে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছেন। কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে তাদের সঙ্গে নানান টালবাহানা করা হচ্ছে। উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের শিলাকুড়ি গ্রামের আব্দুল মালেক, বুড়িডহর গ্রামের রইছ মিয়া, হোসেন আলী ও মাহমুদ আলী জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে তারা সরকারি গুদামে ধান বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে নানান টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অথচ একটি প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে গুদামের কর্মকর্তারা ধান কিনছেন। তাদের অভিযোগ- শনিবার একটি ট্রাক্টরে করে প্রায় ৩শ’ বস্তা ধান আনা হয়। সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে গুদামে ঢুকানো হয়। সিন্ডিকেটের ধান হওয়ায় মাপজোখ ছাড়াই এই ধান গুদামে ঢুকানো হয়। অভিযোগ উঠেছে; উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আলীসহ কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান কিনে অধিক মুনাফায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছেন। এদিকে, ধান ক্রয়ে অনিয়মের বিষয়ে খবর পেয়ে রোববার বিকালে থানা বাজারের কয়েকটি গোডাউনে অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুনজিত কুমার চন্দ। এ সময় খাদ্য অধিদপ্তরের বস্তাসহ বেশকিছু ধান ও চাল জব্দ করেছেন। পরে অনিয়মের বিষয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। কোম্পানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘কৃষকের কৃষি কার্ড, পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অন্য কেউ যদি ধান বিক্রি করেন, তা বুঝবো কীভাবে। হয়তো তারা কৃষকদের ম্যানেজ করে এটা করছেন। তবে পর্যায়ক্রমে সবার ধানই নেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, সরকারি ধান ক্রয়ে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।