ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

নতুন ধার্য করা হোল্ডিং কর নিয়ে সিলেটে ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৭ মে ২০২৪, মঙ্গলবার

এ ঘটনাটি নিয়ে ২০২১ সালেই হৈ- চৈ হয়েছে সিলেট নগরে। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জমানায় ২০০৭ সালে সিলেট নগরবাসীর ওপর প্রথম কর আরোপের সমীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু কামরানের জমানায় ট্যাক্স নিয়ে তেমন কোনো ক্ষোভ ছিল না। এর কারণ ছিল কামরান নগরবাসীর স্বার্থ বিবেচনা ও নতুন সিটি করপোরেশন হিসেবে নগরবাসীর সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে কর আদায় করেছিলেন। এরপর ছিল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ১০ বছর। প্রথম মেয়াদে মেয়র আরিফ কর আদায়ের ব্যাপারে তেমন মনোযোগী হতে পারেননি। তবে; মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ছিল প্রতি ৫ বছর পর পর নতুন সমীক্ষা করার। দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র আরিফ সেই সমীক্ষায় হাত দেন। ২০১৭ সাল থেকে নগরে হোল্ডিং ট্যাক্সের সমীক্ষার বিষয়টি শেষ হয় ২০১৯ সালে। নগর ভবনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ওই সময় সমীক্ষায় দেখা গেছে; সিলেট নগরে ২৭টি ওয়ার্ডে মোট হোল্ডিং রয়েছে ৭৫ হাজার ৪৩০টি।

বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে নতুন সংযোজন হয়েছে ২০ হাজার ৬৩০টি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে; নগরে হোল্ডিং ট্যাক্সের মধ্যে গ্রাহকের ৭ শতাংশ, কনজারভেন্সি কর ৭ শতাংশ, আলো ও পানি কর ৩ শতাংশ ও স্বাস্থ্যকর ৮ শতাংশ। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কর ধার্য করার উদ্যোগ নিলে নগরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নগরবাসী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে অবশ্য মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মোট করের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের ৮ শতাংশ করকে বাদ দিয়ে ২০ শতাংশ করেন। একই সঙ্গে ওই সময় তিনি রিভিউ বোর্ড করে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনাক্রমে কর আদায় করেন। ফলে হোল্ডিং করের বিষয়টি নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে যে ক্ষোভ ছিল সেটি প্রশমিত হয়। তবে; মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে অনুসরণ করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০ শতাংশ কর ধার্যের বিষয়টি চূড়ান্ত করে সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় সেটি পাসও করেন। এরপর অনুমোদনের জন্য সেটি মন্ত্রণালয়ে  প্রেরণ করেন। সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং কর ধার্য শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনে আগে  হোল্ডিং কর বাবদ ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। নতুন কর আদায় হলে সেখানে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বেশি আদায় হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রস্তাবিত কর ধার্যের বিষয়টি অনুমোদন করে গত ২০২১ সালের ৩০শে অক্টোবর সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রেরণ করে। কিন্তু সিটি নির্বাচন সহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে সেটি প্রকাশ করা হয়নি। গত বছরের নভেম্বরে সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি মন্ত্রণালয় প্রেরিত নতুন কর ধার্যের অনুমোদনটি প্রকাশের অনুমতি দেন। এরপর এ ব্যাপারে নগরজুড়ে মাইকিং করে বিষয়টি জানানো হয়। আর মাইকিং শুনেই নগরের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। এদিকে- নতুন আরোপিত কর জানতে নগরবাসী প্রতিদিন সিলেট সিটি করপোরেশনে ভিড় জমাচ্ছেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান এসেসর মো. আব্দুল বাছিত মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ইতিমধ্যে ৪-৫ হাজার গ্রাহক তাদের উপর ধার্যকৃত কর জানতে ফরম সংগ্রহ করেছেন। গত ৪ দিনে জমা পড়েছে এক হাজার ফরম। সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্ধারিত বুথে নগরবাসীকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দেয়া হচ্ছে। এদিকে- নতুন আরোপিত কর নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ ব্যাপারে সার্বিকভাবে তিনি অবগত ছিলেন না। জানান- যেহেতু সাবেক মেয়রের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়ে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা রিভিউ বোর্ড গঠন করে নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করবো। বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের বুথে কর জানতে আসা কয়েকজন গ্রাহক বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- নতুন ধার্য করা কর ঢাকা সিটি করপোরেশনেও নেয়া হচ্ছে না। সেখানে ১৭ শতাংশ কর ধার্য আছে। নতুন আরোপিত কর সিলেট নগরবাসীর জন্য বোঝা বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে বর্তমান পরিষদের মেয়র সহ কাউন্সিলরদের বিকল্প পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান তারা। এদিকে- সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক অস্বাভাবিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি ও চলমান অর্থনৈতিক মন্দার এই কঠিন সময়ে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করা হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান তারা। এক বিবৃতিতে সিলেট মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন,  দেশ-জাতি চরম ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এমন সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক অস্বাভাবিক হারে ১০০  থেকে ৬০০ ভাগ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নগরবাসীর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। রোববার রাতে দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মকসুদ হোসেনের  নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল হোল্ডিং ট্যাক্স সহ নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে ৭ দফা প্রস্তাবনা নিয়ে নগর ভবনের কনফারেন্স হলে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে মতবিনিময় মিলিত হন। মকসুদ হোসেন জানিয়েছেন- তাদের ৭ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে; বর্তমানে আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর কার্যক্রমে নগরবাসীর মধ্যে চাপা উত্তেজান বিরাজ করছে। এটি নিরসনে বৈসম্যহীন কর আরোপ চায় নগরবাসী। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক নিঃস্বার্থ ব্যক্তি ও গণমাধ্যমে কর্মরত ব্যক্তিগণের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের বিষয়ে বিবেচনা করার দাবি জানানো হয়েছে। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করে বলেন- হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং কোনো বৈষম্য হবে না জানিয়েছেন। রোববার রাতে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কদমতলী পঞ্চায়েত নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর প্রতিবাদে সভা করেছে। এ সময় তারা বলেন- সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সময়ে কোনোরূপ যাচাই-বাচাই ছাড়াই সঠিক জরিপ না করেই হোল্ডিং ট্যাক্সের যে তালিকা করা হয়েছিল। সেই তালিকাটির উপর বর্তমানে যে হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কদমতলী বড়বাড়ীর বাসিন্দা প্রবীণ মুরব্বী হাজী সমরাজ মিয়ার সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট রফিকুল হকের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ইছাক মিয়া, কদমতলীর বাসিন্দা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রুস্তুম আলম কুদ্দুস,  মুহিবুর রহমান মুহিব, ২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম, ২৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, তরুণ সমাজসেবী শাহেদ মুন্সী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মেহেদী হাসান সাজাই প্রমুখ। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status