ঢাকা, ১১ মে ২০২৪, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির অবস্থা ভয়ঙ্কর

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
mzamin

দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মাহফুজ উল্লাহ’র লেখা আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’-এর প্রকাশনা উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ‘বাঙ্গালা গবেষণা’।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না। এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন, ভয়ঙ্কর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয় অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটা মেইন। অর্থনীতির এই টেকনিক্যাল কথাবার্তা, গ্রোথ রেইট ৫ পয়েন্ট ৫ হলো না ৫ পয়েন্ট ৭ হলো, তারপরে ইনফুয়েশন ৮ দশমিক ২ হলো না ৮ দশমিক ৩ হলো, এগুলো ভেতরে কচকচালি করলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। মূল সমস্যা হলো যে, আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, রাজনীতিটাও অনেকটা ধ্বংসের পথে এবং সেখানে অর্থনীতি কীভাবে ঠিক থাকবে?

তিনি বলেন, যে রাজনীতিতে ছাত্রজীবনে পজেটিভ রাজনীতি, ভালো রাজনীতি, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি যদি না করেন তবে ভবিষ্যতে ভালো মানুষও হবেন না।

বিজ্ঞাপন
ভ্যালুজ কিছু থাকতে হয়। আমাদের সময়ে কিছু ভ্যালুজ ছিল, মাহবুব উল্লাহ ভাইয়ের তো ছিলই, সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, অনেক কিছু হতে পারতেন। আমরাও করেছি, আমার বন্ধু আলমগীরও (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভ্যালুজগুলো বারে বারে তাড়া করতো, এখনো আমাদেরকে এটা তাড়িত করে, মানুষের জন্য চিন্তা, সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তা- এসব চিন্তার জন্য এখনো আমাদের তাড়িত করে।

অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শুনেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, নাজমুল হক নান্নু, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। শুরুতে লেখক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ’র ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনটি উপলক্ষে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান।

মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশ আজকে একটা কঠিন সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ কীভাবে হবে সেটা নিঃসন্দেহে ৮/১০টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা নিরূপণ করতে পারবো না। আমাদেরকেই আমাদের পথ চয়ন করতে হবে, নিরূপণ করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই,  যেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারবো, মুক্তভাবে আমাদের মত প্রকাশ করতে পারবো এবং আমাদের দেশের যে সার্বভৌমত্ব যেটা নানা কারণে কমপ্রোমাইজড হচ্ছে আমি যেটাকে বলি, নিম্ন সার্বভৌম অবস্থা সেই নিম্ন সার্বভৌম অবস্থা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবো, এই সব কিছু নিয়ে আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে এবং শুধু চিন্তার মধ্যেই নিবিষ্ট থাকলে হবে না আমাদেরকে পথ বের করে নিতে হবে, আমাদের সেই পথে চলতে হবে, সেই পথ হচ্ছে সংগ্রামের, সেই পথ হচ্ছে আত্মদানের, সেই পথ হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসার, দেশকে ভালোবাসার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমিরেটস প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বলেন, এই বাংলাদেশ আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি ভোটের দিনটা ছিল উৎসবের। ’৫৪ সালে আমি ছোট কিন্তু যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের কথা কিছু কিছু যেন মনে আছে এখন এবং অন্যান্য ইলেকশন। আমার বাবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন, ভোটের দিনগুলো আমরা দেখতাম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে, এটা যে কীভাবে এখন হারিয়ে গেল? আমি নিজে ২০১৮ সালে ভোট দিতে সেন্টারে ঢুকতে ছিলাম, আমার স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন, বলে যে, বিএনপিকে যদি ভোট দিতে চান তাহলে ভোটকেন্দ্রে ঢুকবেন না। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় লস, আমাদের সাধনাটা, আমাদের সংগ্রাম, আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেটা ওই সময়ে দুরুহ ছিল সেটা আজকে কোথায়? ইতিহাসের এই জিনিসগুলো আজকে হারিয়ে যাচ্ছে যা মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের বইতে আছে।

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, মাহফুজ উল্লাহ ভাইয়ের বইটি একটা রাজনৈতিক দলিল, এই দলিলে যেটা অফিশিয়াল হিস্ট্রি অব ইস্ট পাকিস্তান, ডিরেল ইস্ট পাকিস্তান সেই অফিশিয়াল হিস্ট্রি থেকে এই ইতিহাস কতো যে ভিন্ন মানে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা এই বইতে আছে। আমি মনে করি এই বইটা লেখকের একটা বিরাট অবদান। সবাই বইটি পড়বেন।

কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবীর, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নারী নেত্রী শিরিন হক, প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান এবং বাঙ্গালা গবেষণার প্রকাশক আফজালুল বাসার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status