শেষের পাতা
১০ বছরে কোটিপতি মুরাদ
জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১১ মে ২০২৪, শনিবারআগের দু’টি নির্বাচনে দেয়া হলফনামায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সব কলামই ‘প্রযোজ্য নহে’ লেখাতে পূর্ণ ছিল। ব্রিকফিল্ড, অট্টালিকা, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাতে পূর্ণ এবার সেই কলাম। আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ৩ প্রতিদ্বন্দ্বীর একজন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া। বিশেষ লোকদের সমর্থন পেয়ে আলোচিত তিনি। সম্পদের কারণেও আলোচিত ছাত্রলীগের এই সাবেক নেতা। তাকে সমর্থন দিয়ে এরইমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসকে বোরহান উদ্দিন আহমেদ। প্রতিদ্বন্ধিতায় এখন ২ জন। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের মো. মনির হোসেন। দৃশ্যত আনারস মার্কার মুরাদের পক্ষেই একাট্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগ। মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ সালে আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদে থাকা মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পরই সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছেন। তার প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের হলফনামায় ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিজের নামে নগদ টাকা ছিল ৫০ হাজার। অস্থাবর-স্থাবর সম্পদের বাকি সব কলামই ‘প্রযোজ্য নহে’ লেখায় পূর্ণ ছিল। বাবা শাহ জাহান ভূঁইয়া থেকে ৩ লাখ এবং ভগ্নিপতি আবু হানিফ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ভোটের খরচ চালাবেন বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেন। ২০১৯ সালে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ টাকা। চাকরি/সম্মানী ভাতা থেকে বাৎসরিক আয় দেখানো হয় ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা। বাকি সব আগের মতোই ‘প্রযোজ্য নহে’। এবার ২০২৪ সালে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তিনি যে হলফনামা দিয়েছেন তাতে দিন বদলের গল্পই যেন চিত্রিত হয়েছে।
একটি ইটভাটার মালিক এখন তিনি। পেশার বিবরণে ফাইভ স্টার ব্রিক্স নামে ওই ইটভাটার নাম উল্লেখ করা হয়। যৌথ মালিকানায় ৬০ শতক কৃষি জমি রয়েছে তার। রয়েছে নিজ বাড়িতে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের দুইতলা বিল্ডিং। এটি তার পিতা কর্তৃক হেবাকৃত বলে উল্লেখ করা হয়। ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ২ হাজার টাকা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতা ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা, নিজের নামে নগদ টাকা রয়েছে ৫ লাখ। বিয়ের উপহার হিসেবে দেখিয়েছেন ৩০ ভরি স্বর্ণ। যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ভাটমাথা গ্রামের মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর বেকার ছিলেন। ২০১২ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হওয়ার পরই পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে জীবনে। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি দুটোই বাড়ে। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতি মাসে সরকারি ভাতা পেয়েছেন ২৭ হাজার টাকা করে। কিন্তু ১০ বছরে কোটিপতি হয়েছেন তিনি। স্থানীয় সূত্র জানায়, ইটভাটাটি এক কোটি ১০ লাখ টাকায় ক্রয় করা হয়। এরপর এটাকে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করতে আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ করা হয়। এ ব্যাপারে মুরাদ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, বাড়ি তার বাবার দেয়া। আর ব্রিকফিল্ড পার্টনারশীপে করা।