ঢাকা, ৬ মে ২০২৪, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

ফারাবীর টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাচ্ছে চাঁদ-সূর্য

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

কুড়িগ্রামের রাজারহাটের প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলে ফাহাদ আল ফারাবী (১৬) নামের এক কিশোর হাতে তৈরি টেলিস্কোপে খালি চোখে মহাকাশের চাঁদ-সূর্যের স্পষ্ট ছবি দেখা যাচ্ছে। টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ-সূর্য স্পষ্টভাবে দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছে। পোষা বিড়ালের নামে রাখা টেলিস্কোপটির নাম দিয়েছেন ঘঊকঙ-ক-১। মেধা ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে টেলিস্কোপ বানানো এমন প্রতিভা দেখে খুশি স্বজনরা। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ফাহাদ আল ফারাবী প্রযুক্তিতে আরও এগিয়ে যেতে পারবে বলে তার বাবা-মা জানিয়েছেন। ফাহাদ আল ফারাবী রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেকুরটারী গ্রামের জয়নুল আবেদীন পারভীন খন্দকার দম্পতির ছোট ছেলে। সে রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

ফাহাদ আল ফারাবী ছোটবেলা থেকে মহাকাশ সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী ছিল। বইয়ের পাতায় গ্রহ, নক্ষত্র, উপগ্রহের অবস্থান পড়ে দেখার খুব ইচ্ছে হয়। ২০২১ সালের শেষে টেলিস্কোপ বানানো সরঞ্জাম সংগ্রহে নেমে পড়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, টেলিস্কোপ কিনতে পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন
বাজারে একটি টেলিস্কোপ ৪০-৫০ হাজার টাকা। শিক্ষার্থী হয়ে এত টাকা সংগ্রহ করতে পারবে না বলে ২০২৩ সালে নিজেই টেলিস্কোপ বানাতে শুরু করে। এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন ফাহাদ আল ফারাবীর বড় ভাই ফাহমিদ আল জাবের। তিন মাসের মধ্যে টেলিস্কোপ বানাতে পেরে খুশি ফাহাদ আল ফারাবী। ফাহাদ আল ফারাবী ইচ্ছে সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে টেলিস্কোপে আগ্রহীদের মাঝে স্বল্প দামে সরবরাহ করবেন বলে জানান তিনি। ফাহাদ আল ফারাবী সঙ্গে কথা হলে সে বলেন, ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছে ছিল মহাকাশ নিয়ে কাজ করার। এস্টোনমি ইন্সট্রমেন্ট না থাকায় কাজ করতে পারি নাই। ২০২৩ সালে ঢাকার এক এস্ট্রনোমি হাউজ থেকে যন্ত্রপাতিগুলো সংগ্রহ করে টেলিস্কোপটি বানাতে সক্ষম হই। টেলিস্কোপটি তৈরি করতে মূলত পিভিসিপাইপ, লেন্স, মাউন্ট, ফোকাল, এ্যাপারচার, মিরর, ফোকাসার, মেটাল থ্রি ডি স্পাইডার ও  কাঠের প্রয়োজন হয়েছে। টেলিস্কোপটি ওজন মাত্র ১২ কেজি। এটির মাধ্যমে ৩ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে দৃশ্য ধারণ করা যায়। ভবিষ্যতে আরও উন্নত টেলিস্কোপ ও মাইক্রো টেলিস্কোপ বানানোর ইচ্ছে আছে। এ ছাড়া সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে মানুষের কাছে স্বল্পদামে টেলিস্কোপ পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করবো।

ফারাবীর বাবা জয়নুল আবেদীন বলেন, ফারাবী যখন টেলিস্কোপ বানানোর কাজ শুরু করেন তখন কিছুটা বিরক্ত লেগেছিল। অবসর সময়ে বাইরে আড্ডা না দিয়ে  ঘরে বসে এসব তৈরি করতে ব্যস্ত থাকায় ভালো লাগতে শুরু করে। ফারাবী দাবা খেলায় খুবই পারদর্শী। জেলা পর্যায়ে ও রাজধানীতে দাবা খেলে নগদ অর্থ পুরস্কার পায়। সেই অর্থ দিয়ে টেলিস্কোপ বানানো শুরু করলে আমি তাকে বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি। টেলিস্কোপটি বানাতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এই মানের টেলিস্কোপ বাজারে ৪০-৫০ হাজার টাকা। ফারাবী আরও ভালো কিছু করুক এ প্রত্যাশা সব সময়।
ফারাবীর বন্ধু রাফিউল ইসলাম রাব্বি বলেন, ফারাবী কোনো বাজে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায় না। টেলিস্কোপ বানানোর কাজে প্রায় সময় পাশে ছিলাম। যেদিন টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ-সূর্য খালি চোখে স্পষ্ট দেখলাম খুবই ভালো লেগেছে। 

রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ফাহাদ আল ফারাবী ভালো ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ কাজে তার আগ্রহ বেশি। ফারাবী আরও ভালো করুক এ কামনা করছি। রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার ও শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ফাহাদ আল ফারাবী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সে পড়াশোনার পাশাপাশি দাবা খেলায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এ বয়সে বাইরে আড্ডা না দিয়ে ঘরে বসে মেধার বিকাশ করতে টেলিস্কোপ বানানোর কাজটি খুবই প্রশংসার দাবিদার। সরকারি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ফারাবীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status