বাংলারজমিন
সিন্ডিকেট চক্রের ঈদ বাণিজ্য
ট্রেনের ১০৫৩ টাকার এসি চেয়ার ২৫০০
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারঅনলাইনে ট্রেনের টিকিট পাওয়া না গেলেও সুবিধাবাদী সিন্ডিকেট চক্রটির সদস্যদের কাছে দ্বিগুণ দামে ঠিকই পাওয়া যাচ্ছে। ্ঈদ এলেই চক্রটির সদস্যরা বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ওই চক্রটির সদস্যরা এরই মধ্যে ট্রেনের যাত্রীদের কাছে বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। লোকমুখে আলোচনা আছে চক্রটির সঙ্গে রেল বিভাগের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। এদের মাধ্যমেই টিকিট সরবরাহ করা হয়। ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহীদের জিম্মি করে স্থানীয় কিছু যুবক দ্বিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করে অতিরিক্ত টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ঢাকার মণিপুরীপাড়ায় বসবাসরত এডভোকেট ও রাজনীতিবিদ সাহারা পারভীন মনা ঈদ করার জন্য পুরাতন পঞ্চগড়ের নিজ বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি জানান, ট্রেনের টিকিট নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। অনলাইনে টিকিট না পেয়ে রাশেদ নামের এক পরিচিত ভাইকে বাহির থেকে টিকিটের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করি। রাশেদ যোগাযোগ করে জানতে পারে টিকিট আছে কিন্তু দাম বেশি দিতে হবে। ১০৫৩ টাকার এসি চেয়ারের সিটের জন্য ২৫০০ টাকা ও ৫৫০ টাকার শোভন চেয়ারের সিটের জন্য ১২০০ টাকা চাওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আল আরিফ ফারহান স্বর্গ বলেন, আমি ২০শে এপ্রিলের টিকিটের জন্য প্রতিদিন অনলাইনে চেষ্টা করছি। কিন্তু পাচ্ছি না। এদিকে, ট্রেন ভ্রমণ বেশির ভাগ মানুষের পছন্দনীয় হলেও পুরাতন বগির সিটের সমস্যার কারণে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। রেলমন্ত্রী বদলের পর পরই ৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের বগি বদল হয়ে গেছে। দ্রুতযান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস নামের তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন পঞ্চগড়-ঢাকা যাতায়াত করে। এছাড়া বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন রাজশাহী যাতায়াত করে। আগে এ ৪টি ট্রেন চায়নার আধুনিক সুযোগ- সুবিধা সংবলিত বগিগুলো দিয়ে ওই রুটে চলাচল করতো। কিন্তু বর্তমানে এ ট্রেনগুলো ১৮ বছরের পুরনো ভারতের বগি দিয়ে চলাচল করছে। ভালো বগিগুলো অন্য রুটে দেয়া হয়েছে। এতে সময় লাগছে বেশি। পঞ্চগড় থেকে ঢাকার দূরত্ব ৬৩৯ কিলোমিটার। ঢাকা যেতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা। কোনো কোনো সময় তারও বেশি সময় লেগে যায়। এ দীর্ঘ সময় ভ্রমণের জন্য আরামদায়ক সিটের প্রয়োজন হলেও যাত্রীরা সে সুবিধা পাচ্ছেন না। যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, উন্নত ও আধুনিক সৌন্দর্য্যবর্ধন বগি পরিবর্তন করে সংযোজন করা হয়েছে দীর্ঘদিনের পুরনো বগি। একটু স্বাস্থ্য ভালো ও লম্বা হলেই বসতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। হাঁটু সামনের সিটে লেগে যাচ্ছে। আকতারুল নামের রেলের এক কর্মকর্তা বলেন, সিট সমস্যার কারণে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমাদের কিছু করার নেই। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতো বগি পরিবর্তন করা হয়েছে। পঞ্চগড় রেল স্টেশন মাস্টার মাসুদ পারভেজ বলেন, টিকিট যার ভ্রমণ তার। তবে নিয়ম অনুযায়ী যে ভ্রমণ করবে তার রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকিট নিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে জরিমানা দিতে হবে। অনেককে জরিমানাও দিতে হচ্ছে। আমিও শুনেছি বাইরে কারও কারও কাছে বেশি দামে টিকিট পাওয়া যায়। যা অবৈধ। আর যারা এদের কাছ থেকে টিকিট নিয়ে চলাচল করছে তারাও অপরাধী। এসব সুযোগ সন্ধানী কীভাবে টিকিট পাচ্ছে তা আমার জানা নেই। বর্তমানে ট্রেনের বগিগুলো পুরাতন ও সিট কিছুটা চাপাসহ ছোট হলেও সিটসংখ্যা বেড়েছে। আগের বগিতে ৯২টি সিট ছিল। এখনকার বগিতে সিট সংখ্যা ১০৫টি। এজন্য বেশি যাত্রী ভ্রমণ করতে পারছেন।