ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ, ঝুঁকি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার
mzamin

দুর্বল এক বা একাধিক ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খারাপ ব্যাংকগুলো এক না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্যতামূলক একীভূত করতে পারবে। ইতিমধ্যেই দুটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে এমনিতেই উদ্বিগ্ন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। দুর্বলমানের সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের পর সম্প্রতি এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই নীতিমালার কিছু কিছু বিধান এ উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি চাকরি হারাবেন। পরিচালকরা পাঁচ বছর অন্য কোনো ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবেন না। 
এদিকে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্টসহ দুর্বল আরও তিনটি ব্যাংক তুলনামূলক সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) একীভূত হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন
একীভূতকরণ নিয়ে এই চার ব্যাংকের মধ্যে চলতি সপ্তাহে চুক্তি হতে যাচ্ছে। এগুলোর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বেসিক ব্যাংক। ঈদের পরই ব্যাংক দুটির মধ্যে একীভূতকরণ চুক্তি হতে পারে। গত বুধবার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চাকরি হারাবেন এমডি-ডিএমডিরা: নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, একীভূত হওয়া দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) চাকরি হারাবেন। এ ছাড়া একীভূত হওয়া দুই ব্যাংকের মধ্যে খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকের পরিচালক আগামী ৫ বছর অন্য কোনো ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবেন না। তবে পাঁচ বছর পর আবার একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফিরতে পারবেন। যদিও এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এ বিধানের মাধ্যমে সেসব পরিচালককে একধরনের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। যাদের কারণে ব্যাংক খারাপ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পাঁচ বছর বিরতির পর তাদের আবার পর্ষদে ফেরার বন্দোবস্ত রাখা হলো। 
বাধ্যতামূলক একীভূতকরণ: নীতিমালার আলোকে, খারাপ অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলো নিজ থেকে একীভূত না হলে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূতকরণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে দুই ব্যাংক এক করার আগেই নগদে পাওনা পরিশোধ করা হবে। একীভূতকরণের আগে দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি সমঝোতা সই করতে হবে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে সর্বশেষ আদালতের কাছে একীভূতকরণের আবেদন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব ব্যাংক নিজ থেকে একীভূত হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের বিভিন্ন নীতি সহায়তা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সিআরআর, এসএলআর সংরক্ষণে ছাড় দেয়া হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণভাবে একটি ব্যাংকের ৪ শতাংশ হারে নগদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রাখতে হয়। এখন ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি ব্যাংকের হয়তো ১ শতাংশ সিআরআর ছাড় দেয়া হলো। এতে ওই ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা ছাড় পেলো। এ পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ব্যাংকটি ভালো করতে পারবে।

নীতিমালা জারির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সার্কুলারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন এবং মধ্যস্থতায় একটি ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিদেশি ব্যাংকের শাখাও একীভূত করা যাবে। তবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংক একীভূত হবে না। 

একীভূতকরণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সতর্কতা: এদিকে ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে এ খাত-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সব ধরনের নিয়ম-নীতি মেনে একীভূতকরণের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। জোরপূর্বক একীভূতকরণ না করার কথা বলেছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি মেনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার। এমনকি ব্যাংক খাতে সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বৈষম্য দেখছেন ব্যাংকাররা: নীতিমালায় বলা হয়েছে, একীভূত হওয়া ব্যাংকের কর্মীদের তিন বছর পর্যন্ত ছাঁটাই করা যাবে না। এমনকি একীভূত হওয়ার আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে বেতন ও শর্তে কর্মরত ছিলেন, সেই একই বেতন ও শর্তে তাদের বহাল রাখতে হবে। তিন বছর পর কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বিলুপ্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে একীভূত ব্যাংকের কোনো পদে রাখা যাবে না। তবে এসব পদের কাউকে চাইলে নতুন করে নিয়োগ দেয়া যাবে। 

যেভাবে বাধ্যতামূলক একীভূত: নীতিমালা অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে দুর্বলমানের চিহ্নিত হওয়া ব্যাংকগুলো মানোন্নয়নে ব্যর্থ হলে ওই ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ধরনের ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক দায় ও সম্পদ গ্রহণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করবে। এতে ওই ব্যাংকের বিস্তারিত আর্থিক তথ্য উল্লেখ থাকবে। এতে কেউ সাড়া না দিলে যেকোনো ব্যাংককে দায়িত্ব নেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষা করা হবে। তারা দায়দেনার পাশাপাশি শেয়ার বিনিময় ও সুনামের (গুডউইল) হিসাব করবে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্কিম গঠন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর একীভূত হওয়া কোম্পানি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

দুর্বল ব্যাংকের মূল্য নির্ধারণ: একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূল্য নির্ধারণ কীভাবে হবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্যান্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগের মাসের শেষ তারিখের বাজার দরে মূল্যায়ন হবে। অন্যান্য সিকিউরিটিজ তাদের পূর্ববর্তী মাসের শেষ তারিখে বিদ্যমান অভিহিত মূল্য অথবা নগদায়নযোগ্য মূল্যে মূল্যায়ন করতে হবে। জমি/প্রাঙ্গণ ও অন্যান্য অস্থাবর সম্পদ এবং দাবি পরিশোধের সূত্রে অর্জিত সম্পদ বাজারদরে মূল্যায়ন করতে হবে। আসবাব ও সরঞ্জামের দাম ঠিক হবে লিখিত মূল্যের ভিত্তিতে।

পাঠকের মতামত

সব ব্যাংক দুর্বল সবল ব্যাংক কোনটি দেখান?

চোর
৭ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

কোন ঝুঁকির কথা হচ্ছে? ক'দিন আগেওতো নিয়ন্ত্রনকারি কতৃপক্ষ শ্রেণিকৃত ঋনে বড় ছাড় দিয়ে মন্দ ঋণের ভারী বোঝায় শাকের আঁটি চাপিয়ে দিলেন!

মোহাম্মদ হারুন আল রশ
৭ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:২৩ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status