ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

কেএনএফ’র বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান

বান্দরবান প্রতিনিধি
৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার
mzamin

বান্দরবানে হামলা ও ব্যাংক লুটের পর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম এলাকায় যৌথবাহিনীর এই সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী কেএনএফ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। একইসঙ্গে সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক খন্দকার আল মঈন। গতকাল বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। বলেন, গত কয়েকদিনে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার দুইটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত, টাকা লুটপাট ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া। দ্বিতীয়ত, সক্ষমতা প্রদর্শন করা। কেএনএফ তাদের সমর্থক ও প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দেখাতে চাইছে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন
এই লক্ষ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কাজ করছিল। কিন্তু সেই সুযোগে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট, পুলিশ ক্যাম্পে গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছে।

সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, রুমা ও থানচি উপজেলায় গত সোম ও মঙ্গলবার ব্যাংক ডাকাতি ও লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। র‍্যাব, সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ সকলের প্রচেষ্টায় কোনো রকমের ঝুঁকি না নিয়ে তাদের কয়েকটি কৌশলের একটি ব্যবহার করে অপহরণের শিকার ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গোপনীয়তার কারণে কোন কৌশল অবলম্বন করে এবং রুমার কোন এলাকা থেকে নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়েছে তা জানাতে রাজি হননি র‌্যাবের এ কর্মকর্তা। একইসঙ্গে অপরাধীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মিলিত সাঁড়াশি অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। লুট করে নেয়া ১৪টি অস্ত্র উদ্ধারসহ তাদের নির্মূল করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। পরে গভীর রাতে আলীকদম উপজেলায় পুলিশ ও সেনাদের একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। তবে গতকাল কারা গুলি চালিয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। 

থমথমে বান্দরবান
দু’টি ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র লুট, অপহরণ ও গোলাগুলির ঘটনার পর বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদরে গতকাল থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে থানচি বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট। আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছেন অনেক নারী ও শিশু। থানচি এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও পুলিশের সতর্ক পাহারা দেখা গেছে। পুলিশ বলছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। গতকাল দুপুরে থানচি উপজেলা সদরের ব্রিজের মাথায় গিয়ে দেখা যায়, চাঁদের গাড়ি করে এলাকা ছাড়ছেন অনেকে। স্থানীয় টিঅ্যান্ডটি পাড়ার বাসিন্দা জুলি আক্তার বলেন, দিন দিন গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে। ছোট দুই ছেলে-মেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে। তাই তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বান্দরবান সদরে চলে যাচ্ছেন। জুলি আক্তারের সঙ্গে থাকা রিনা আক্তার বলেন, তিনিও সন্তানদের নিয়ে চলে যাচ্ছেন। সদরের ব্রিজের মাথা এলাকা থেকে বান্দরবান সদরগামী চাঁদের গাড়ি ছাড়ে। সেখানে প্রায় আট ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা গেছে, পাঁচটি চাঁদের গাড়ি করে যাওয়া যাত্রীদের বেশির ভাগ এলাকা থেকে চলে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বেশি নারী ও শিশু। থানচি উপজেলা সদরের ইউপি চেয়ারম্যান অং প্র মোরং বলেন, নারী ও শিশুরা আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন পরিচিতজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। উপজেলার একমাত্র বড়বাজার থানচি বাজার। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকান বন্ধ।
কাপড়ের দোকানদার নুরুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যখন গুলির শব্দ পান, তখন ভয়ে দোকান ছেড়ে চলে যান। ১০ মিনিট পর আবার এসে দোকান বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকেন। গোলাগুলি বন্ধ হওয়ার পর বাসায় যান। ভয়ে সকাল থেকে আর দোকান খোলেননি। দুপুরে বিজিবি নামার পর দোকান খুলেছেন। সরজমিন দেখা গেছে, এই বাজারে ২৪০টি দোকান রয়েছে। দুপুরে ১৫ থেকে ২০টি দোকান খোলা দেখা গেছে। থানচি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দুপুরে থানচি থানার চারপাশে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ সদস্যদের থাকতে দেখা গেছে। থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি থানায় একজন করে সহকারী পুলিশ সুপারকে (এসপি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

রুমা যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্যাংক লুটপাট, অপহরণ ও সশস্ত্র হামলার ঘটনার পর বান্দরবান পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বান্দরবান সদরে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। শনিবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে তিনি ঢাকা থেকে রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। তিনি বলেন, সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুমায় পৌঁছাবেন সাড়ে ১০টায়। সেখান থেকে উড়োজাহাজেই বান্দরবান সদরে যাবেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টায় সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক মিলিত হবেন। এদিনই বিকালে তার ঢাকায় ফেরার কথা আছে।

ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়তি নিরাপত্তা
বান্দরবানে দুই দিনে তিন ব্যাংকে ডাকাতি ও গোলাগুলির ঘটনায় ঈদের সময় সারা দেশে ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়তি নিরাপত্তা নিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া শাখার প্রধান এআইজি এনামুল হক সাগর বলেন, সারা দেশেই ঈদ কেন্দ্রিক কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরমধ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা সেই নিরাপত্তার পাশাপাশি বাড়তি ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি। দেশের প্রতিটি ইউনিটকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এআইজি এনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশ সব সময় সতর্ক আছে। শুধু ব্যাংক নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও পুলিশ সতর্ক নজরদারির মধ্যে রেখেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় টহলও জোরদার করা হয়েছে।

রুমা ও থানচি থানায় ৫ মামলা
রুমা ও থানচিতে হামলা ও ব্যাংক লুটের ঘটনায় ৫টি মামলা করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক লুটের ঘটনায় রুমা থানায় ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ৩টি ও থানচি কৃষি ব্যাংকে টাকা লুটের ঘটনায় থানচি থানায় ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল  দুপুরে রুমা  ও থানচি থানায় এ মামলা দায়ের করেন। থানচি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, থানচি কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার হ্লা শৈ থোয়াই মারমা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংক ম্যানেজারকে মামলা করতে থানায় আসতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী জানান, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রুমায় ৩টি ও থানচিতে ২টি মামলা করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

মুক্তিপণ দিয়ে ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধার হয়েছে, এটাও কৌশল!

Shamim
৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধার হয়েছে, এটাও কৌশল!!

অসহায়
৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৫:১৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status